কম্পাস পত্রিকা

BREAKING NEWS:

Card image cap

স্বাধীনতা সংগ্রামী শহীদ সুখদেব থাপার

ভগৎ সিং এর নাম উচ্চারিত হলে তাঁর নামটাও চলে আসে।দুজন দুই রাজ্যে জন্মেছিলেন। বলতে চাইছি সুখদেব এর কথা ।সুখদেব থাপার। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুষ্টিমেয় যে কজন নিঃশব্দে ফাঁসির দড়িকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম সুখদেব।মৃত্যুর পূর্বমুহুর্তে ভগত সিং এর সাথে গলা মিলিয়ে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে আওয়াজ তুলেছিলেন “ইনকিলাব জিন্দাবাদ"। বর্তমান প্রজন্মের সাথে পরিচয় ঘটাতেই এ লেখার অবতারণা। সুখদেব থাপার ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের একজন শহিদ। তিনি শহীদ ভগৎ সিংহের এক অনন্য বন্ধু হিসাবেও পরিচিত। বিপ্লবী সুখদেব জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯০৫ সালের ১৫ মে পাঞ্জাবের লুধিয়ানা শহরে। সুখদেবের বাবার নাম ছিল শ্রী রামলাল থাপার। তাঁর জন্মের তিন মাসে আগেই তাঁর পিতার মৃত্যু হয়।সুখদেবের লালন পালন তার কাকা শ্রী অচিন্তরাম থাপার-এর কাছেই হয়। সুখদেবের জন্মের সময় তার কাকা অচিন্ত্যরাম জেলে সাজা খাটছিলেন। এক বিপ্লবী বাতাবরণে সুখদেব বড়ো হচ্ছিলেন। সুখদেব যখন তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র , গভর্নর তার বিদ্যালয়ে আসে। প্রধান শিক্ষকের আদেশে ছাত্ররা সবাই গভর্নর কে স্যালুট করে, কিন্তু সুখদেব তা করেনি। তখন সুখদেবকে জিজ্ঞাসা করা হল কেন সে গভর্নরকে স্যালুট করল না, সুখদেব পরিষ্কার বলে দিল, সে কোনো ইংরেজকে স্যালুট করবে না। ১৯২৮ সালের ৮ অগাস্ট প্রতিষ্ঠিত হয় “হিন্দুস্তান সোসালিস্ট রিপাবলিকান আর্মি(HRSA)।সুখদেব ছিলেন এই দলের পাঞ্জাব শাখার প্রধান কর্মকর্তা। এখানেই তাঁর সাথে ভগত সিং এর আলাপ ও ঘনিষ্ঠতা হয়। ভগৎ সিং এর তুলনায় সুখদেব পড়াশুনা কম করতো। কিন্তু তাঁর স্মৃতিশক্তি খুব তীক্ষ্ণ ছিল। বিপ্লবী কাজ পরিচালনার জন্য তাঁরা একটা বাড়ী ভাড়া নিল। দিনের বেলায় বাইরে থাকত আর রাত করে ফিরত। এভাবেই বাড়ির মালিক ও আশপাশের লোকজনের সন্দেহ হলো। এই কারণে সুখদেব নিজের মাকে সেই বাড়িতে নিয়ে এলো। এবার কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে, সে উত্তর দিত সে কাজ করে, অনেক দূরে রাস্তার কাজ চলছে। দিন-রাত কাজ করে বাড়ি আসতে দেরি হয়। সুখদেব ছিলেন সাহসী এবং দৃঢ় চিত্তের মানুষ। লাহোরে যখন বোম বানানোর কাজ শুরু হল, তখন সে ফিরোজপুর থেকে বোমের মশলা নিয়ে আসতেন। একবার মশলা আনতে গিয়ে সিপাহীদের খপ্পরে পড়ে গেছিল। এর ফলে সুখদেবকে অনেক মার খেতে হয়েছে। সুখদেব চুপচাপ মার খেতে থাকে, কিন্তু কিছু বলেননি, কারণ তার কাছে পিস্তল, কার্তুজ আর বোম বানানোর মশলা ছিল। ১৯২৮ সালে সাইমন কমিশনের বিরোধিতা করতে গিয়ে লাঠিচার্জে লালা লাজপত রায় মারা যান, তখন সুখদেবরা লালা লাজপত রায় এর হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯২৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভগৎ সিং,শুকদেব ও রাজগুরু ভুলবশত পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট স্যান্ডার্সকে হত্যা করেন। এই ঘটনাটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল ।এই ঘটনার কয়েকমাস পর ভগৎ সিং,শুকদেব ও রাজগুরু গ্রেপ্তার হন। স্যান্ডার্স হত্যার মামলাটি 'লাহোর ষড়যন্ত্র' নামে পরিচিত। বিচারে ভগৎ সিং, সুখদেব ও রাজগুরু কে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ১৯৩১ সালের ২৩ শে মার্চ, বিপ্লবীরা ফাঁসি এই তিন বিপ্লবীর ফাঁসী হয়। ফাঁসির সময় সুখদেবের বয়স ছিল মাত্র ছাব্বিশ বছর।লাহোর কারাগারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পরে শিবরাম রাজগুরু, ভগত সিং এবং সুখদেব থাপারের মরদেহ চরম গোপনীয়তায় দাহ করা হয়। ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য আত্মাহুতি দেওয়া এই তিনজন বীর শহীদের স্মৃতিসৌধ ভারতের পাঞ্জাবের ফিরোজপুর জেলার শতদ্রু নদীর তীরে হুসেইনিওয়ালা গ্রামে অবস্থিত। প্রতি বছর ২৩ শে মার্চ তাঁদের মৃত্যুর দিনটিকে স্মরণে রেখে শ্রদ্ধার সাথে "শহীদ দিবস" উদযাপিত হয়।

VIDEOS:

View All

TRENDING:

Card image cap

মহাকাশ-বিজয়ী প্রথম নারী ভ্যালেন্টিনা তেরেসকোভা

                                                                                                                                                   
……………………………………………………………………………………
আজকের প্রজন্ম তাঁর নাম জানে না। কিন্তু একদিন তিনিই একা পাড়ি দিয়েছিলেন বায়ু-বিহীন, নির্জন পিচ-কালো মহাকাশে। বাবা ছিলেন ট্রাক্টর-চালক; মা ছিলেন বস্ত্র-কারখানার শ্রমিক। তাদের মেয়ে ভ্যালেন্টিনা তেরেসকোভা হলেন মহাকাশ-বিজয়িনী প্রথম নারী। তেরেসকোভার সাফল্য ভারতের মানুষকেও এতটাই প্রভাবিত করেছিল যে বাংলা চলচিত্রেও তাঁর নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে উল্লেখিত হয়েছে। ৬ মার্চ ছিল তাঁর জন্মদিন। তাঁকে নিয়ে একটি ছোট প্রতিবেদন।
……………………………………………………………………………………
ভ্যালেন্টিনা ভ্লাদিমিরোভনা তেরেসকোভা পৃথিবীর প্রথম মহিলা মহাকাশচারী। মহাকাশ অভিযান করা ছাড়াও তিনি একজন প্রযুক্তিবিদ বা ইঞ্জিনীয়ার ছিলেন এবং পরবর্তীকালে রাশিয়ান স্টেট ডুমার সদস্যও হয়েছিলেন। তিনিই মহাশূন্য থেকে ঘুরে আসা আজ পর্যন্ত কনিষ্ঠতম মহিলা। ১৯৬৩ সালের ১৬ জুন ভোস্টক-৬ এ চেপে তেরেসকোভা একাই মহাকাশে গিয়েছিলেন। তেরেসকোভার মহাকাশ-যান ভোস্টক পৃথিবীকে প্রায় ৪৮ বার প্রদক্ষিণ করেছিল। প্রায় তিন দিন মহাশূন্যে কাটিয়েছিলেন তিনি।
তেরেসকোভা মধ্য রাশিয়ার ইয়ারোস্লাভ ওব্লাস্টের অধীনে তুতায়েভস্কি জেলার মাসলেনিকোভো গ্রামে ১৯৩৭ সালের ৬ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। নভেম্বর বিপ্লবের পর তাঁর বাবা-মা বেলারুশ থেকে অভিবাসিত হয়ে রাশিয়াতে আসেন। তেরেসকোভার বাবা ছিলেন একজন ট্রাক্টরচালক এবং মা বস্ত্রশিল্প কারখানার শ্রমিক। যুদ্ধের কারণে একটু দেরীতে দশ বছর বয়সে ১৯৪৫ সালে তেরেসকোভা বিদ্যালয়ে যেতে শুরু করেন। ১৯৫৩ সালে বিদ্যালয় ত্যাগ করে দূরশিক্ষণ পাঠ্যক্রমে শিক্ষালাভ করেন। ১৭ বছরে তিনি স্নাতক হন। সোভিয়েত মহাকাশ প্রোগ্রামের জন্য  নির্বাচিত হবার আগে তেরেসকোভা একটি টায়ার কারখানায় কাজ শুরু করেন; পরে তিনি একটি টেক্সটাইল কারখানার প্রকৌশলী হন। শৈশবকালে তিনি প্যারাসুটের মাধ্যমে আকাশে চড়ার স্বপ্ন দেখতেন। ভারতের মতো একটি পুঁজিবাদী দেশে সেই স্বপ্ন হয়ত অধরাই থেকে যেত। একটি শ্রমিকের পরিবারের মেয়ে আকাশে উড়বে! বিমান চালাবে! ভাবাই যায় না। অত অর্থ কোথায়? সময়ই বা কই? কিন্তু সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন সকল প্রতিভাকে বিকাশের সুযোগ দিয়েছিল। তেরেসকোভা কাজের ফাঁকে ফাঁকে স্থানীয় বিমানচালনা ক্লাবে স্কাইডাইভিং-এ প্রশিক্ষণ নেন। ২২ বছর বয়সে ২১শে মে, ১৯৫৯ সালে তিনি প্রথম স্কাই-ডাইভ করেন। ততদিনে অবশ্য সোভিয়েত ইউনিয়নে্র মহাকাশ অভিযান শুরু হয়ে গিয়েছে। ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর সমগ্র দুনিয়াকে বিস্মিত করে মহাকাশে পাড়ি দেয় স্পুটনিক। তারপর একে একে মহাকাশে নন-ম্যানড মিশন চালায় বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক দেশটি। 
স্কাই-ডাইভিং-এ অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান তেরেস্কোভাকে নভোচারী হিসেবে যোগ দিতে ব্যাপকভাবে সহযোগিতা করেছিল। তিনি কসমোনাট কর্পসের অংশ হিসাবে সোভিয়েত বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন এবং প্রশিক্ষণ শেষ করে অফিসার হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেন। ১৯৫৯ সালে মহিলা মহাবিদ্যালয়ের প্রথম দলটি মহাকাশ-কর্মসূচী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও, তেরেসকোভা মহাকাশচারী শিক্ষার্থী হিসাবে মহাকাশ প্রোগ্রামে থেকে যান। পরে তিনি ঝুকভস্কি এয়ার ফোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং একাডেমি থেকে স্নাতক হন এবং মহাকাশে যাত্রার জন্য যোগ্যতা অর্জন করেন। ৪০০ জনের মধ্য থেকে নির্বাচিত হন তেরেসকোভা। এরপর চলে ১৮ মাসের কঠোর প্রশিক্ষণ।
তারপর এল সেই ঐতিহাসিক দিন। ১৬ জুন, ১৯৬৩। ভোস্টক-৬ মহাকাশ-যানে করে বৈকানুর উৎক্ষেপণ-কেন্দ্র থেকে তিনি একাই পাড়ি দিলেন মহাকাশে। ৭০ ঘন্টা তিনি মহাকাশে কাটান। মহাকাশে অবশ্য তখন তিনি একা ছিলেন না। ১৪ জুন (১৯৬৩ খ্রীঃ) ভোস্টক-৫-এ করে মহাকাশে পৌঁছেছেন ভ্যালেরি ভাইকোভস্কি। দুটি ভিন্ন পথে তাঁরা রওনা হলেও দূরত্ব কমিয়ে পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাত্র তিন কিলোমিটার ব্যবধানে চলে আসেন। তেরেসকোভা মহাকাশে ভাইকোভস্কির সঙ্গে বেতার-মাধ্যমে যোগাযোগ করেন এবং ‘সীগাল’ নামে কথাবার্তা চালান। মহাকাশ-যান থেকে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও কথা বলেন। সোভিয়েত টেলিভিশন ক্যাপসুলে করে তেরেসকোভার মহাকাশ অভিযান সম্প্রসারিত করেছিল। 
প্রসঙ্গতঃ পৃথিবীর প্রথম মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিনও ছিলেন একজন সোভিয়েত নাগরিক। ১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল তিনি মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিলেন এবং পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করেছিলেন। গ্যাগারিনের দুই বছর পরে মহাকাশে যান ভ্যালেন্টিনা তেরেসকোভা। দ্বিতীয় মহিলা মহাকাশচারীও একজন সোভিয়েত নাগরিক ছিলেন। তাঁর নাম স্বেতলানা সাভিৎস্কায়া। তেরেসকোভার ১৯ বছর পর ১৯৮২ সালে স্বেতলানা মহাকাশে যান। তিনি দুই বার মহাকাশ অভিযান করেন এবং বিশ্বের প্রথম মহিলা হিসেবে স্পেসওয়াক করেন। 
তবে তেরেসকোভা ১৯৬৩ সালের পরে আর কখনো মহাকাশে যাননি। ১৯৯৭ সালে তিনি মেজর জেনারেল পদমর্যাদা অর্জন করে বিমান বাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। মহাকাশ অভিযানের সাথে সাথে ১৯৬১ সালে তিনি স্থানীয় কমসোমল বা যুব কমিউনিস্ট লীগে যোগ দেন। পরবর্তীকালে সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন। সোভিয়েত নারী সমিতির পরিচালক নিযুক্ত হন ১৯৬৮ সালে। তেরেসকোভা ১৯৬৬ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত সুপ্রিম সোভিয়েতের প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দফতর নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির  বিশিষ্ট সদস্য ছিলেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরে তিনি ১৯৯৫ ও ২০০৩ সালে দুবার জাতীয় রাজ্য ডুমার কাছে নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে তার আঞ্চলিক সংসদ, ইয়ারোস্লাভল ওব্লাস্ট ডুমার হয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন তেরেসকোভা। ২০১১ সালে তিনি সংযুক্ত রাশিয়া দলের সদস্য হিসাবে জাতীয় রাজ্য ডুমায় নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং ২০১৬ ও ২০২১ সালে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবনে ১৯৬৩ সালের ৩ নভেম্বর আন্দ্রিয়ান জি. নিকোলায়েভ নামের একজন নভোচারীকে বিয়ে করেন তেরেসকোভা। তাঁদের একটি কন্যা আছে। তেরেশকোভা "সোভিয়েত ইউনিয়নের বীর" উপাধি এবং দুবার ‘অর্ডার অব লেনিন’ পুরস্কারেও ভূষিত হন। ইউরি গ্যাগারিন ১৯৬৮ সালের ২৭ মার্চ মাত্র ৩৪ বছর বয়সে একটি বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হলেও এই অসামান্যা মহিলা ৮৭ বছর বয়সে আজও জীবিত আছেন। 
পরবর্তী সময়ে আমেরিকান মহাকাশ সংস্থা নাসা অনেক মহাকাশ অভিযান করলেও একথা উল্লেখ করা প্রয়োজন যে জার আমলের দুর্দশাগ্রস্ত শত শতাব্দী পিছিয়ে থাকা রাশিয়া ১৯১৭ সালে বিপ্লবের পর জ্ঞানে-বিজ্ঞানে-সাহিত্যে-শিল্পে-ক্রীড়াক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি লাভ করে। সোভিয়েত ইউনিয়নই প্রথম মহাকাশ অভিযান করে, মানুষ পাঠায়। সোভিয়েত ইউনিয়নে নারীরা শিক্ষায় ও মর্যাদায় কোন স্তরে উন্নীত হয়েছিল তার উল্লেখযোগ্য প্রমাণ হলেন ভ্যালেন্টিনা তেরেসকোভা।

Card image cap

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় মাথা হেঁট করলেন না


…………………………………………………………………………………
রবীন্দ্র-শরৎ-নজরুল উত্তর যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক তিনি। গণদেবতা, হাঁসুলি বাঁকের উপকথা, আরোগ্য-নিকেতনের মত উপন্যাসের কথা আজ ক’জন পড়ে! কিন্তু এই অসামান্য সৃষ্টিগুলিকে বাদ দিয়ে বাংলা সাহিত্য হয় না। তিনি যেমন ছিলেন একজন গুণী সাহিত্যিক, তেমনই ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি উঁচু মূল্যবোধের সাক্ষ্য রেখে গিয়েছেন, যা অনুসরণীয়। তারই স্মৃতিচারণা। 
……………………………………………………………………………………

রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, “সত্যমূল্য না দিয়েই সাহিত্যের খ্যাতি করা চুরি / ভালো নয় ভালো নয়, নকল সে সৌখিন মজদুরি।“ সাহিত্যে যা বলব, নিজের জীবনের সঙ্গে তার মিল থাকবে না? তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়  তাই কোনো কিছুর পরোয়া না করেই জেলে চলে গেলেন। তিনি নিজেই একদিন "গণদেবতা"-র নায়ক হয়ে গেলেন! সেইসময় স্বাধীনতা আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। শ্লোগান উঠেছে - ‘ইংরেজ তুমি ভারত ছাড়।‘ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ও সক্রিয়ভাবে সেই “ভারত ছাড়ো আন্দোলনে” যুক্ত হয়ে পড়লেন। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের তখন লেখক হিসাবে নামডাক হয়েছে। তাঁকে অনেক সাহিত্যিক  বারণ করছেন,  প্রত্যক্ষ আন্দোলনে জড়িয়ে না পড়তে। বিখ্যাত সাহিত্যিক শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় ছিলেন তারাশঙ্করের বন্ধু। তিনিও তাঁকে বারবার সাবধান করছেন, এভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ো না। ভুল করছো। বিপদে পড়বে। আমরা লেখক। এসব আমাদের কাজ নয়।
তারাশঙ্কর হেসে বললেন,  দ্যাখো আমি জীবন আর সাহিত্যকে আলাদা করে দেখি না। গল্প - উপন্যাসে ভাল ভাল কথা বলবো, কিন্তু নিজের জীবনের ক্ষেত্রে সেটা মানবো না? তা কী করে সম্ভব? 
অবশেষে তারাশঙ্করকে একদিন লাভপুরের এক গোপন ডেরা থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করল।
বিচার হবে। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তারাশঙ্কর। এস ডি ও ছিলেন মণি সেন। এস ডি ও তারাশঙ্করের খুব ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন। এস ডি ও তারাশঙ্করকে বারবার অনুরোধ করলেন, আপনি একবার শুধু বলুন, আপনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন। এসব নোংরা কাজ আর করবেন না। তাহলে আমি আপনাকে ছেড়ে দেবো।
তারাশঙ্কর বললেন,  দেশকে আমি ভালবাসি। আপনি একে নোংরা কাজ বলছেন! ছিঃ! 
তারাশঙ্কর মাথা হেঁট করলেন না। বিচারে এক বছরের জেল হ'লো।
জেল থেকে একদিন মাথা উঁচু করে বেরিয়ে এলেন তারাশঙ্কর। "জ্ঞানপীঠ" পুরস্কারে সম্মানিত  উপন্যাস   "গণদেবতা"-র অন্যতম  নায়ক দেবু পণ্ডিতের মত। আজকাল এরকম মেরুদণ্ড সোজা রাখা সাহিত্যিক কোথায়? 

Card image cap

গ্রেটা থুনবার্গ

‘'গত ৩০ বছর ধরে বিজ্ঞানের কাছে বিষয়টি একদম পরিস্কার। কিন্তু হাউ ডেয়ার ইউ? কোন স্পর্ধায় আপনারা দেখেও না দেখার ভান করছেন? আমার তো এখানে থাকার কথা নয়। আমার তো স্কুলে থাকার কথা। অথচ আপনারা আমাদের ইয়ং ছেলেমেয়েদের কাছে আসছেন আশা দেখানোর জন্য? আপনারা আমাদের স্বপ্ন চুরি করেছেন। আমাদের ছোটবেলা চুরি করেছেন। মানুষ মারা যাচ্ছে। পুরো ইকো সিস্টেম ধ্বসে পড়ছে। আমরা এক মহাবিলুপ্তির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। আর আপনারা কথা বলছেন টাকা নিয়ে, রূপকথার সাম্রাজ্য নিয়ে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সমস্ত চোখ আপনাদের দিকে। আর আপনারা যদি আমাদের স্বপ্ন চুরমার করে দেন আমি কথা দিচ্ছি আমরা কেউ আপনাদের ক্ষমা করব না।ক্সক্স নিউইয়র্কে রাষ্ট্রসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সম্মেলনের মঞ্চে এই কথাগুলোই বলেছিলেন বছর ষোলোর কিশোরীটি। সেটা ছিল ২০১৮ সালের ডিসেম্বর। তারপর ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে দাভোসে আয়োজিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামক্স-এর মঞ্চে আরও একবার এই অকুতোভয় ছোট্ট মেয়েটি রাষ্ট্রনেতাদের চোখে চোখ রেখে জানিয়ে এসেছিলেন, ‘‘মুখে বড় বড় কথা নয়, এই পৃথিবীকে ‘শিশুর বাসযোগ্যক্স করে যেতে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে রাষ্ট্রনেতাদের। না হলে অদূর ভবিষ্যতে গোটা মানবসভ্যতাই সংকটের মধ্যে পড়ে যাবে। ভবিষ্যতের বিষয়ে যত্নবান হওয়ার জন্য রাষ্ট্রনেতাদের কাছে আর্জি জানাতে আসিনি আমরা। অতীতেও ওঁরা আমাদের উপেক্ষা করেছিলেন। এবারও তাঁরা সেটাই করবেন। আমরা এখানে তাঁদের এটাই বলতে এসেছি যে, পরিবর্তন আসছে। তা তাঁদের পছন্দ হোক, বা না হোক।ক্সক্স শুধু যে সেখানে দাঁড়িয়েই গ্রেটা আলটপকা কথা বলে ফেললেন তা একেবারেই নয়; এর প্রস্তুতি বহু আগে থেকেই। গ্রেটা থুনবার্গ সুইডেনের একজন স্কুল-শিক্ষার্থী। মাত্র ১৫ বছর বয়সে গ্রেটা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অবিলম্বে কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করার জন্য আন্দোলনে নামেন। ২০১৮ সালে গ্রেটা স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দেন এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধে জরুরি পদক্ষেপের দাবিতে সুইডিশ পার্লামেন্টের সামনে একাই প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে যান। তারপরই স্টকহোমের অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও গ্রেটার সঙ্গে যোগ দিতে থাকে। তারা সম্মিলিতভাবে শুক্রবারকে ঘোষণা করে ‘ফ্রাইডে ফর ফিউচারক্স হিসাবে। এই ছেলেমেয়েদের আন্দোলন এখন সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে গিয়েছে। ‘‘আমাদের দেশের মতো ধনী দেশগুলোর ভোগবিলাসের জন্য পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পৃথিবী জেগে উঠছে, বদল আসছে। সে আপনাদের ভালো লাগুক আর নাই লাগুক।ক্সক্স রাষ্ট্রপুঞ্জের পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে বলেন গ্রেটা। গ্রেটা জানেন যে কৃত্রিম উপগ্রহের পাঠানো গত ৫০ বছরের ছবি প্রমাণ করে দিয়েছে সবচেয়ে বেশি অরণ্য ধ্বংস হয়েছে উন্নত দেশগুলিতে। মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী উন্নত দেশগুলিই। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি কষ্ট করছে দরিদ্র দেশের মানুষগুলো। ‘‘আমি আর অপ্রিয় হওয়ার ভয় পাই না। আমার কাছে ক্লাইমেট জাস্টিস মুখ্য। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমরা পৃথিবীর ষষ্ঠ মহাবিলুপ্তির মুখোমুখি। বাস্তুতন্ত্রগুলো ভেঙে পড়ছে। আমরা এক গণবিলুপ্তির মুখোমুখি।ক্সক্স গ্রেটার সতর্কবার্তা। ২০১৯ সালের ১৫ই মার্চ ১১২টি দেশের আনুমানিক ১.৪ মিলিয়ন শিক্ষার্থী তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে জলবায়ু প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে। বিষয়টি নজরে পড়ে রাষ্ট্রনেতাদেরও। এরপরেই জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি উপেক্ষা না করার জন্য রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে আবেদন জানান তিনি। আন্দোলনের বার্তা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। স্বনামধন্য অনেকেই এই ছোট্ট মেয়েটির আন্দোলনের সমর্থনে এগিয়ে আসেন। গ্রেটা থুনবার্গ তাঁর এই কার্যক্রমের জন্য অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে নরওয়ের তিনজন সংসদ সদস্য তাঁকে ‘শান্তিতে নোবেল পুরস্কারেরক্স জন্য মনোনীত করেন। মনোনয়নের খবর পেয়ে টুইটারে গ্রেটা লিখেছেন, ‘‘এই মনোনয়নের জন্য আমি সম্মানিত ও কৃতজ্ঞ। আমরা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য স্কুল স্ট্রাইক শুরু করেছি; যতদিন করতে হয় ততদিন করে যাব আন্দোলন।ক্সক্স গ্রেটা থুনবার্গ সুইডেনের বাসিন্দা। তাঁর জন্ম ২০০৩ সালের ২ জানুয়ারি। তাঁর পিতা হলেন অভিনেতা স্ভান্তে থুনবার্গ, মাতা মালেনা এরম্যান একজন অপেরা শিল্পী। তাঁর ঠাকুর্দা ওলফ থুনবার্গ একজন অভিনেতা ও পরিচালক। ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে গ্রেটা প্রথম টিইউডিএক্স আলোচনায় বলেন যে তিনি ৮ বছর বয়সে প্রথম জলবায়ু পরিবর্তনের কথা শুনতে পান। কিন্তু তিনি বুঝতে ব্যর্থ হন কেন এই বিষয়ে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। ১১ বছর বয়সে তিনি হতাশ হয়ে পড়েন এবং কথা বলা একদম বন্ধ করে দেন। পরবর্তীকালে তাকে বেশ কিছুদিন উত্তমরূপে চিকিৎসা করানো হয়। তিনি আলোচনায় বলেন তাঁর ডিসঅর্ডারগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল তিনি যখন প্রয়োজন অনুভব করতেন শুধুমাত্র তখনই কথা বলতেন। তিনি বলেন, ‘‘আমার অনেকটা এমন মনে হচ্ছিল যে আমি যদি এই সম্পর্কে প্রতিবাদ না করি তাহলে ভিতরে ভিতরে মারা যাব।ক্সক্স তাঁর পিতা তাঁর বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করাকে একদম মেনে নিতে পারেননি; কিন্তু তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমার মেয়ে ঘরে অখুশিভাবে বসে থাকতে পারে, অথবা যদি চায় তবে সে বাইরে গিয়ে প্রতিবাদও করতে পারে।ক্সক্স অর্থাৎ তিনি তাকে বাধা দেবেন না। গ্রেটা কার্বনের প্রভাব কমাতে তাঁর পরিবারের সকল সদস্যকে বোঝাতে সক্ষম হন ও বিমানে চড়ে ভ্রমণ করাকে বাদ দিতে বলেন। গ্রেটা নিজেও এগুলো করেন না। এত কম বয়সে গ্রেটার নেতৃত্বদানের ক্ষমতা নজর কেড়েছে গোটা বিশ্বের। প্রভাবশালী ‘টাইমক্স ম্যাগাজিনের বিচারে গত বছর কম বয়সী প্রভাবশালীদের তালিকায় ছিলেন তিনি। মূলতঃ শিক্ষার্থী ও যুবদের পরিবেশ রক্ষার কাজে উদ্বুদ্ধ করেন গ্রেটা। পরিবেশ সচেতনতার উদ্দেশ্যে স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আন্দোলনেও নেমেছেন তিনি। পোল্যান্ড ও দাভোস ফোরামে রাষ্ট্রসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনের সম্মেলনে বক্তব্য রাখার পর সারা বিশ্বে অনেক স্কুল পড়ুয়ার জন্য উদাহরণ হয়ে ওঠেন গ্রেটা থুনবার্গ। আমাদের দেশে দিল্লি ও উত্তর ভারতের বায়ু দূষণ এই মুহূর্তে সংবাদ শিরোনামে। সমস্যা শুধু স্বাস্থে্যর নয় সমগ্র অর্থনীতির। সম্প্রীতি ‘নেচারক্স পত্রিকায় প্রকাশিত একটি রিপোর্ট বলছে অত্যাধিক কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিশেষ করে ভারতে অর্থনৈতিক বিকাশ এবং শ্রমের উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে। প্রসঙ্গতঃ কানাডা, জার্মানি, নিউজিল্যান্ড বা ব্রিটেনের মত উন্নত দেশগুলিতে প্রতি ইউনিট কার্বন নির্গমনে এই হার মাত্র ০.১% কমবে, কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উৎপাদনশীলতার হার কমতে পারে তিন থেকে পাঁচ শতাংশ; বলছেন কনকার্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। ২০১৮-য় সারা পৃথিবী জুড়ে ৪০ বিলিয়ন মেট্রিক টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন হয়েছে, যা থেকে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে বিশ্ব জিডিপির দুই শতাংশ। তবে বলা হচ্ছে নিম্ন আয়ের দেশগুলিতে এই ক্ষতির পরিমাণ উচ্চ আয়ের দেশগুলি থেকে অন্তত নয় গুণ বেশি হবে! কিন্তু এসব কথা শুনছে কি কেউ? ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সতর্ক করেন গ্রেটা। চাঁচাছোলা ভাষায় প্রধানমন্ত্রীর নাম করে তিনি সাফ বলেন, ‘‘প্রিয় মিস্টার মোদি, শুধু আলোচনায় কাজ হবে না। আপনাকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।ক্সক্সগ্রেটার এই আন্দোলনের প্রশংসা করেছে ইউ.এন. উইমেন্সও। তাঁরা টুইট করেছেন  সুরক্ষিত ভবিষ্যতের লক্ষ্যে যুব সম্প্রদায়ের কথা শোনাটা যে কত জরুরী সেটা প্রমাণ করেছে ও। তবে খ্যাতির পাশাপাশি বিস্তর সমালোচনাও হচ্ছে গ্রেটাকে নিয়ে। ব্রিটেন এবং অস্টে্রলিয়ার মতো দেশ গ্রেটার এই আন্দোলনের নিন্দা করেছে। সমালোচকদের দাবি পড়াশোনা ছেড়ে এভাবে আন্দোলন করাটা ভুল। ভ্রান্ত নীতির দ্বারা পরিচালিত স্কুল পড়ুয়াদের প্রশংসা করাটাও স্নেহশীলতার আতিশয্য ছাড়া আর কিছুই নয়। যদিও যাবতীয় সমালোচনার উত্তর নিজের চেনা মেজাজেই দিয়েছেন গ্রেটা। বলেছেন, ‘‘যাঁরা আমাদের স্কুলে ফেরত পাঠাতে চান, তাঁদের বলতে চাই কোন পার্থক্য গড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা সত্যিই খুব ছোট। কিন্তু আমাদের আন্দোলন প্রতিদিনই কলেবরে বাড়ছে। এই গ্রহে যতটুকু রসদ বেঁচে আছে সেটাই সুষ্ঠুভাবে ব্যবহারের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। আমাদের দাবি একটাই। ভারী ভারী বিজ্ঞানের কথা না বলে সেগুলোকে মন দিয়ে শুনুন। তারপর সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করুন।ক্সক্স গত আগস্টে গ্রেটা সম্পূর্ণ নবীকরণযোগ্য শক্তিচালিত ইয়টে চড়ে নিউইয়র্ক পাড়ি দেন। কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় আনতে এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যক্তিগত উদ্যোগগুলির একটি। উল্লেখযোগ্য এই অভিযান গ্রেটা আয়োজিত এক শুক্রবারের বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের পর অনুষ্ঠিত হয়। নিউইয়র্কে ডোনাল্ড ট্রাম্পের চোখে চোখ রেখে গ্রেটা তাকিয়েছিলেন - সেই ছবি মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। ট্রাম্প তাঁকে বিদ্রুপ করে একটি টুইট করেন, যার সারমর্ম গ্রেটা একজন হাসিখুশি বাচ্চা মেয়ে (হ্যাপি ইয়ং গার্ল)। অবশ্য তাতে আর কারই বা কী আসে যায়? কিন্তু প্রশ্ন একটা থেকেই যায়। এই হাসিখুশি বাচ্চা মেয়েটা যদি পারেন, আমরা প্রতিবাদ করতে পারছি না কেন? কবে পারবো?!

Card image cap

২৩ মার্চ ভগৎ সিং -এর শহীদ দিবস

২৩ শেষ মার্চ ১৯৩১ বেলা ১১টা, জেলের মধ্যে শেষবারের মতো পরিবারের সাথে দেখা হল ভগৎ সিং এর। ফাঁসির দিন ঠিক ছিলো ১৯৩১ সালের ২৪শে মার্চ। সেইমতো জেলের মধ্যেই ভগৎ সিং এর আত্মীয়রা দেখা করতে এসেছে। একে একে এগিয়ে এলেন বাবা কৃষাণ সিং, দিদি অমর কউর, দুই ভাই - কুলবির ও কুলতার। সবশেষে দেখা হল মা ও ছেলের। বিদ্যাবতী দেবী লোহার গারোদের ফাঁক দিয়ে ভগৎ সিং এর সারা গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে অশ্রু সজল কণ্ঠে বললেন- "ভগনওয়ালা ! কিছুতেই তোমার আদর্শ বিসর্জন দিওনা। মনে রেখো, একদিন না একদিন সকলকেই মরতে হবে। কিন্তু যে মৃত্যু দুনিয়ার মানুষকে নাড়া দিয়ে যায় সেই মৃত্যু তো সব থেকে মহান। আমি এইভেবে গর্বিত যে একটা বড় ও মহান আদর্শের জন্য আমার 'ভগনওয়ালা' আত্মোৎসর্গ করেছে, আমি ভগৎ সিং -এর মা। তোমার কাছে আমার একটাই কেবল ভিক্ষা আছে। আমি চাই আমার ছেলে ফাঁসির দড়ি গলায় নিয়ে দীপ্ত কণ্ঠে বলবে 'ইনকিলাব জিন্দাবাদ'। আমার ছেলের ওজন ফাঁসির আদেশ শুনে বেড়ে যাবে কমবে না।" - ভগৎ সিং হাসিমুখে উত্তর দিয়েছিলেন - "তুমি যা বলছ তাই হবে মা"। যদিও সকলের অগোচরে ভগৎ সিং এর ফাঁসির দিন এগিয়ে এনেছিল ব্রিটিশ সরকার। কারণটি সংক্ষেপে এই রকম- ১৯৩১ সালের ২৪ শে মার্চ করাচীতে জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশন বসার কথা ছিল। ইতিমধ্যেই দেশের অভ্যন্তরে প্রবল দাবি উঠেছে এই মহান বিপ্লবীদের ফাঁসির রদ করবার জন্য বড়লাট লর্ড আরউইনের সাথে দেখা করুক গান্ধীজি। সুভাষচন্দ্র সদ্য জেল থেকে মুক্তি পেয়ে গান্ধীজিকে একান্তভাবে একই অনুরোধ করেছেন। সুভাষচন্দ্র সহ অনেক দেশ নেতাদের বক্তব্য গান্ধী-আরউইন চুক্তির অন্যতম শর্তই হোক এই বিপ্লবীদের মুক্তি।গান্ধীজী বড়লাটের সাথে দেখা করলেন অনেক বিষয়ের মাঝে এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে তিনি বড় লাটকে বললেন না। উল্টে তিনি বললেন ওই দিন করাচীতে কংগ্রেসের অধিবেশন, ওই একই দিনে যেন ভগৎ সিংদের ফাঁসি না দেওয়া হয়। গান্ধীজীর এই সাক্ষাতের পর দেশবাসীর আশা ছিল ভগত সিং সহ বিপ্লবীরা মুক্তি পাবে। কিন্তু ঘটলো ঠিক উল্টো, ব্রিটিশ সরকার ফাঁসির দিন পরিবর্তন করে ২৩ শে মার্চ ঠিক করল। এই সিদ্ধান্ত ভগৎ সিং দের সরকারি ভাবে জানানো হলো ২৩ শে মার্চ বিকেল পাঁচটার পরে। প্রস্তুত হও। আর মাত্র আড়াই ঘন্টা। - আড়াই ঘণ্টা কেন এখনই নিয়ে চলো না ! আমরা তো প্রস্তুত আছি সহাস্যে বলেছিলেন ভগৎ সিং। সাধারণত ফাঁসির দন্ডাদেশ কার্যকর করা হতো ভোর বেলায়। সেই প্রথা ভেঙে সন্ধ্যেবেলায় ভগৎ সিং, রাজগুরু এবং শুকদেব কে নিয়ে আসা হল ফাঁসির মঞ্চের সামনে। সেই শেষের সময়টা কিভাবে কাটিয়েছিলেন বিপ্লবীরা? মাকে দেওয়া কথা ভগৎ সিং রাখতে পেরেছিলেন? সন্ধ্যা ৭:২২ মিনিটে তিন জন মিছিল করে যাত্রা শুরু করলেন ফাঁসির মঞ্চের দিকে। ডাইনে রাজগুরু, মাঝে ভগত সিং এবং বামে সুকদেব। তারা উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করলেন 'বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক' - 'ইনকিলাব জিন্দাবাদ'। - হতচকিত হয়ে পড়ল জেলের কয়দিরা। তারা বুঝতে পারল বিপ্লবীরা চলেছে বধ্যভূমির দিকে। জেলে আটক সমস্ত বিপ্লবীরা ভগৎ সিং এর সাথে গলা মিলিয়ে জানান দিল ইনকিলাব জিন্দাবাদ। জেলের অপর সমস্ত কয়েদিরাও একইভাবে উচ্চ কন্ঠের স্লোগানে মুখরিত করে তুললো জেলের আকাশ বাতাস। তখন জেলে শোনা যাচ্ছে একটাই সুউচ্চ কণ্ঠস্বর ইনকিলাব জিন্দাবাদ - বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক। - সেই চরম মুহূর্তে ভগত সিং পরিহাস করে ডেপুটি কমিশনার কে লক্ষ্য করে বললেন- 'ইউ আর ভেরি লাকি'। - উত্তরে ডেপুটি কমিশনার বলেছিলেন- হুয়াই ? - আজ তুমি দেখতে পাবে ভারতের বিপ্লবীরা আদর্শের জন্য কিভাবে হাসিমুখে মৃত্যুবরণ করতে পারে। তারপর তারা এগিয়ে গেলেন বদ্ধভূমির দিকে - মুখের কালো কাপড় ছুড়ে ফেলে দিয়ে হাসিমুখে সেই দড়িকে চুম্বন করলেন। ভগৎ সিং বলেছিলেন - "সুন্দর এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা আমার ছিল একথা গোপন করতে আমি চাইনা। কিন্তু আমার বেঁচে থাকার একটি শর্ত আছে। কারারুদ্ধ, শৃঙ্খলিত জীবন আমি বহন করতে ইচ্ছুক নই।... আজ আমি সানন্দে, হাসিমুখে এমনভাবে ফাঁসির রজ্জুকে বরণ করতে চাই, যা দেখে ভারতের ঘরে ঘরে মায়েরা প্রার্থনা করবে তাদের সন্তান যেন ভগৎ সিং এর মত হয়ে ওঠে। আমার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে দেশের স্বাধীনতা বেদি মূলে আত্মদান করতে এত বিপুলসংখ্যক মানুষ এগিয়ে আসবে যে সাম্রাজ্যবাদ তার সমস্ত দুষ্ট শক্তি প্রয়োগ করেও বিপ্লবের অগ্রগতিকে রুখতে পারবে না।" তথাকথিত ব্রিটিশ সিংহের ভয় ছিল ভগৎ সিং দের মৃত দেহ কেও। তাই পরিজনদের হাতে তা তুলে না দিয়ে রাতের অন্ধকারে লোক চক্ষু আড়ালে শতদ্রু নদীর তীরে পেট্রোল ঢেলে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় তাদের মৃতদেহ। দেশমাতৃকাকে স্বাধীন করতে ফাঁসির মঞ্চে প্রাণ বিসর্জন সেই সময়ে এদেশে স্বাভাবিক ঘটনা ছিল। এই দামাল ছেলেদের দেখেই কবি বলেছিলেন- উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, "ভয় নাই, ওরে ভয় নাই- নিঃশেষে প্রাণ কে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।'' এদেশের তরুণ প্রজন্মের এই বাণীকে সত্য প্রমাণ করতে এতোটুকু পা কাঁপেন। কিন্তু শহীদ-ই- আজম ভগত সিংয়ের ফাঁসির ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেদিন সারাদেশে প্রচন্ড বিক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল - যা ইতিপূর্বে এত ব্যাপক আকারে লক্ষ্য করা যায়নি। এই বিক্ষোভের আঁচ থেকে গান্ধীজি ও রেহাই পাননি সেদিন। ব্রিটিশ সরকারের শত চেষ্টা সত্ত্বেও ২৪ শে মার্চ শতদ্রু নদী তীরে লক্ষ মানুষ সমবেত হয়, বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে। তারা শহীদ ভগত সিং, রাজগুরু, শুকদেবের নামে জয়ধ্বনি দিয়ে মিছিল সংগঠিত করে। একটা ধুমকেতুর মতো ভগৎ সিং ভারতবর্ষের রাজনৈতিক আঙ্গিনায় আবির্ভূত হয়েছিলেন। মাত্র ২৪ বছর বয়সে তার ফাঁসি হয়। কিন্তু কোটি কোটি দেশবাসীর দৃষ্টি ছিল তার উপরে নিবন্ধ। ভগৎ সিং তাদের সামনে হাজির করেছিলেন স্বাধীনতার ভিন্ন এক দিক নির্দেশ।

Card image cap

স্বাধীনতা সংগ্রামী শহীদ সুখদেব থাপার

ভগৎ সিং এর নাম উচ্চারিত হলে তাঁর নামটাও চলে আসে।দুজন দুই রাজ্যে জন্মেছিলেন। বলতে চাইছি সুখদেব এর কথা ।সুখদেব থাপার। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুষ্টিমেয় যে কজন নিঃশব্দে ফাঁসির দড়িকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম সুখদেব।মৃত্যুর পূর্বমুহুর্তে ভগত সিং এর সাথে গলা মিলিয়ে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে আওয়াজ তুলেছিলেন “ইনকিলাব জিন্দাবাদ"। বর্তমান প্রজন্মের সাথে পরিচয় ঘটাতেই এ লেখার অবতারণা। সুখদেব থাপার ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের একজন শহিদ। তিনি শহীদ ভগৎ সিংহের এক অনন্য বন্ধু হিসাবেও পরিচিত। বিপ্লবী সুখদেব জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯০৫ সালের ১৫ মে পাঞ্জাবের লুধিয়ানা শহরে। সুখদেবের বাবার নাম ছিল শ্রী রামলাল থাপার। তাঁর জন্মের তিন মাসে আগেই তাঁর পিতার মৃত্যু হয়।সুখদেবের লালন পালন তার কাকা শ্রী অচিন্তরাম থাপার-এর কাছেই হয়। সুখদেবের জন্মের সময় তার কাকা অচিন্ত্যরাম জেলে সাজা খাটছিলেন। এক বিপ্লবী বাতাবরণে সুখদেব বড়ো হচ্ছিলেন। সুখদেব যখন তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র , গভর্নর তার বিদ্যালয়ে আসে। প্রধান শিক্ষকের আদেশে ছাত্ররা সবাই গভর্নর কে স্যালুট করে, কিন্তু সুখদেব তা করেনি। তখন সুখদেবকে জিজ্ঞাসা করা হল কেন সে গভর্নরকে স্যালুট করল না, সুখদেব পরিষ্কার বলে দিল, সে কোনো ইংরেজকে স্যালুট করবে না। ১৯২৮ সালের ৮ অগাস্ট প্রতিষ্ঠিত হয় “হিন্দুস্তান সোসালিস্ট রিপাবলিকান আর্মি(HRSA)।সুখদেব ছিলেন এই দলের পাঞ্জাব শাখার প্রধান কর্মকর্তা। এখানেই তাঁর সাথে ভগত সিং এর আলাপ ও ঘনিষ্ঠতা হয়। ভগৎ সিং এর তুলনায় সুখদেব পড়াশুনা কম করতো। কিন্তু তাঁর স্মৃতিশক্তি খুব তীক্ষ্ণ ছিল। বিপ্লবী কাজ পরিচালনার জন্য তাঁরা একটা বাড়ী ভাড়া নিল। দিনের বেলায় বাইরে থাকত আর রাত করে ফিরত। এভাবেই বাড়ির মালিক ও আশপাশের লোকজনের সন্দেহ হলো। এই কারণে সুখদেব নিজের মাকে সেই বাড়িতে নিয়ে এলো। এবার কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে, সে উত্তর দিত সে কাজ করে, অনেক দূরে রাস্তার কাজ চলছে। দিন-রাত কাজ করে বাড়ি আসতে দেরি হয়। সুখদেব ছিলেন সাহসী এবং দৃঢ় চিত্তের মানুষ। লাহোরে যখন বোম বানানোর কাজ শুরু হল, তখন সে ফিরোজপুর থেকে বোমের মশলা নিয়ে আসতেন। একবার মশলা আনতে গিয়ে সিপাহীদের খপ্পরে পড়ে গেছিল। এর ফলে সুখদেবকে অনেক মার খেতে হয়েছে। সুখদেব চুপচাপ মার খেতে থাকে, কিন্তু কিছু বলেননি, কারণ তার কাছে পিস্তল, কার্তুজ আর বোম বানানোর মশলা ছিল। ১৯২৮ সালে সাইমন কমিশনের বিরোধিতা করতে গিয়ে লাঠিচার্জে লালা লাজপত রায় মারা যান, তখন সুখদেবরা লালা লাজপত রায় এর হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯২৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভগৎ সিং,শুকদেব ও রাজগুরু ভুলবশত পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট স্যান্ডার্সকে হত্যা করেন। এই ঘটনাটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল ।এই ঘটনার কয়েকমাস পর ভগৎ সিং,শুকদেব ও রাজগুরু গ্রেপ্তার হন। স্যান্ডার্স হত্যার মামলাটি 'লাহোর ষড়যন্ত্র' নামে পরিচিত। বিচারে ভগৎ সিং, সুখদেব ও রাজগুরু কে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ১৯৩১ সালের ২৩ শে মার্চ, বিপ্লবীরা ফাঁসি এই তিন বিপ্লবীর ফাঁসী হয়। ফাঁসির সময় সুখদেবের বয়স ছিল মাত্র ছাব্বিশ বছর।লাহোর কারাগারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পরে শিবরাম রাজগুরু, ভগত সিং এবং সুখদেব থাপারের মরদেহ চরম গোপনীয়তায় দাহ করা হয়। ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য আত্মাহুতি দেওয়া এই তিনজন বীর শহীদের স্মৃতিসৌধ ভারতের পাঞ্জাবের ফিরোজপুর জেলার শতদ্রু নদীর তীরে হুসেইনিওয়ালা গ্রামে অবস্থিত। প্রতি বছর ২৩ শে মার্চ তাঁদের মৃত্যুর দিনটিকে স্মরণে রেখে শ্রদ্ধার সাথে "শহীদ দিবস" উদযাপিত হয়।

Card image cap

সর্বকালের শ্রেষ্ঠ গোলকিপার লেভ ইভানোভিচ ইয়াসিন‌

ফুটবল ইতিহাসে মাত্র একজন গোলকিপার জিতেছেন ব্যালন ডি অ্যর। তিনি হলেন সর্বকালের সেরা গোলকিপার লেভ ইয়াসিন। লেভ তাঁর কেরিয়ারে ১৫১টি পেনাল্টি শট ঠেকিয়েছিলেন এবং ২৭০ ম্যাচে ক্লিন শীট রেখেছিলেন! তিনি ১৯৮৮ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বোচ্চ বেসামরিক সন্মান ‘অর্ডার অফ লেনিনক্স সম্মাননায় ভূষিত হন। এছাড়াও অসংখ্য অগণিত পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন লেভ ইয়াসিন। ফুটবল ইতিহাসের সেরা গোলকিপার কে? পিটার শিল্টন, দিনো জোফ, গর্ডন ব্যাঙ্কস, অলিভার কান কিংবা হালের বুঁফো, ক্যাসিয়াস, ন্যুয়ার অনেক গোলকিপারের নাম আসলেও একজনকে কেউ ছাড়িয়ে যেতে পারেননি; তাঁর নাম লেভ ইয়াসিন! ফুটবলের যেকোনো পজিশনের সেরা ফুটবলার নিয়ে তর্ক বির্তকের শেষ নেই; তবে ব্যতিক্রম একটা পজিশনে। কোনো সন্দেহ ছাড়াই সর্বকালের সেরা গোলকিপার লেভ ইয়াসিন। লেভ ইয়াসিন এমন একজন গোলকিপার যাঁর নামানুসারে ফ্রান্স ফুটবল গোলকিপারদের ‘ইয়াসিন ট্রফিক্স নামক একটা এওয়ার্ড দেওয়ার প্রচলন শুরু করেছে। ২০০৯ সালে সেন্ট্রাল ব্যাংক অফ রাশিয়া তাঁর স্মরণেই ২ রুবলের কয়েন ছাড়ে বাজারে। একটি দেশের মুদ্রায় একজন খেলোয়াড়ের ছবি সংবলিত থাকাই বলে দেয় তিনি কতটা ভালো ফুটবলার ছিলেন, ছিলেন কত ভালো মানের গোলকিপার! আর এই দুটি উদাহারণই বলে দেয় তাঁর অবস্থান, তাঁর ক্ষমতা, তাঁর বিশালতা, তাঁর মান ও মূল্য! একই সঙ্গে দেখায় তাঁর দেশ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের খেলার প্রতি ভালোবাসার গভীরতা। বস্তুতঃ, খেলাধূলার প্রতি সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত রাষ্টে্রর এই উৎসাহের কারণেই সেই দেশ ক্রীড়াক্ষেত্রে দ্রুত এগিয়ে গিয়েছে। ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মস্কো শহরের এক শ্রমিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এই মহান ফুটবলার লেভ ইভানোভিচ ইয়াসিন।

YOU MAY ALSO LIKE:

Card image cap

সন্দেশখালি ও শেখ শাহজাহান : দায় কার?

শেখ শাহজাহান নামটি এখন পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সিংহভাগ মানুষের পরিচিত। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ শেখ শাহজাহান সন্দেশখালির বেতাজ বাদশা বলে পরিচিত ছিলেন। রেশন দুর্নীতি তদন্তে ২৫ জানুয়ারী ইডি সরবেড়িয়ায় শাহজাহানের সুবিশাল বাড়িতে পৌঁছালে তাদের অফিসারদের কেবল বাধা দেওয়া নয়, শারীরিক ভাবেও নিগৃহীত করা হয়। এরপর থেকেই তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। পুলিস কয়েক মাস ধরে তাকে খুঁজে পায় না। কিন্তু মানুষ বিশেষতঃ মহিলারা সন্দেশখালির বিভিন্ন গ্রামে শেখ শাহজাহানের বাহিনীর বিরুদ্ধে পথে নামলে রাজ্য সরকারের পুলিস তাকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হয়। তৃণমূল কংগ্রেসও তাকে অপসারণ করে দায় ঝেড়ে ফেলতে চায়। কিন্তু শেখ শাহজাহান ও তার সঙ্গী শিবু হাজরা, উত্তম সর্দারদের এই অপরাধের বাড়বাড়ন্ত কেন?

এই রাজ্যে যখন সিপিএম-নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকার ছিল, তখন শাহজাহান শাসক দলের সাথেই যুক্ত ছিল। আজ সিপিএম নেতারা যাই বলুন, সেই সময় থেকেই তার যাত্রা শুরু হয়েছিল। শাসন থেকে হাড়োয়া, মিনাখাঁ, বাসন্তী, ক্যানিং হয়ে সন্দেশখালি, বসিরহাট, হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কৃষি জমি দখল করে নদীর নোনা জল ঢুকিয়ে মাছের ভেড়ি করার উদ্যোগ সিপিএম-সরকারই নেয়। এতে প্রচুর কাঁচা টাকা উপার্জন হতে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক চরিত্রের পরিবর্তন হতে থাকে। একদল মানুষ যেমন ফুলে-ফেঁপে ওঠে, তেমনই কৃষি জমির অভাব সৃষ্টি হওয়ায় বিপুল সংখ্যক মানুষ কাজের খোঁজে ভিন রাজ্যে, এমনকি বিদেশেও পাড়ি দেয়। বাড়ির মেয়েরা মিন ধরার জন্য সকাল থেকে হাঁড়ি আর জাল নিয়ে খালে নেমে পড়তে বাধ্য হয়। ভেড়ি নিয়ে শুরু হয় মারামারি, কাটাকাটি। গড়ে ওঠে দুষ্কৃতী বাহিনী। সিপিএম পরিচালিত গ্যাংয়ের দাপটে মানুষ মুখে কুলুপ আঁটে। নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হয়। ক্যানিং পূর্বে রেজ্জাক মোল্লা, বাসন্তীতে সুভাষ নস্কর, সন্দেশখালিতে অবনী রায়েরা বিপুল ভোটে জিততে থাকে। সওকাত মোল্লা, শেখ শাহজাহানেরা এলাকার ত্রাস হয়ে ওঠে। পুলিস সরকারি দলের অঙ্গুলিহেলনেই চলত বলে অভিযোগ। কেবল টিএমসি, কংগ্রেস বা এসইউসিআই নয়, বামফ্রন্টের অন্যতম শরিক আরএসপি-র উপরেও আক্রমণ নেমে আসে। বাসন্তীর চরাবিদ্যায় আরএসপি নেতা ও রাজ্যের তৎকালীন সেচমন্ত্রী সুভাষ নস্করের ভাতৃবধু সহ চার জনকে একই দিনে হত্যা করা হয়। মন্ত্রীত্ব রক্ষার জন্য আরএসপিকে কিল খেয়ে হজম করতে হয়।

রাজ্যে পট-পরিবর্তন হলে তৃণমূল যেন সিপিএমের দেখানো পথ ধরে চলা শুরু করে। ২০১৩ সালের মধ্যে সওকাত মোল্লা, শেখ শাহজাহানেরা টিএমসিতে যোগ দেয়। সওকাত হন দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি। শেখ শাহজাহান হন যুব তৃণমূলের ব্লক প্রধান। ভেড়ি দখল, পোল্ট্রি দখল, জমি দখল, আইনী এবং বেআইনী মদের ব্যবসা, ফেরীঘাটের ইজারা, বাজার দখল ও হোটেল বানানো চলতে থাকে অবাধে। বর্তমানে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা এবং তৎকালীন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি শুভেন্দু অধিকারীর স্নেহচ্ছায়াতেও লালিত-পালিত হয়েছেন শেখ শাহজাহান।

আজ সিপিএম এবং বিজেপি শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে গলা চড়িয়েছে। কিন্তু শাহজাহানের উত্থানে তাদের ভূমিকা কি অস্বীকার করা যায়? আর তৃণমূল কংগ্রেস যতই ‘সামান্য ঘটনা’, ‘আইন আইনের পথে চলবে’ বলুক, কিংবা তড়িঘড়ি ‘অভিযোগ গ্রহণ কেন্দ্র’ তৈরী করে বিক্ষোভ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করুক না কেন, শেখ শাহজাহানদের অপরাধের দায়িত্ব কি তাদেরও নয়?

বিজেপি এখানে ‘হিন্দু মহিলাদের’ উপর হামলা করা হয়েছে বলে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরী করতে চাইছে। কিন্তু অভিযোগ কি কেবল শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে? শিবু হাজরা, উত্তম সর্দার সহ অভিযুক্তদের অধিকাংশেরই তো ধর্মীয় পরিচয় হিন্দু। ‘সন্দেশখালির মুখ’ রেখা পাত্রকে এইবারে লোকসভা ভোটে দাঁড় করিয়েছে বিজেপি। কিন্তু, দেশের মানুষ সাক্ষী মালিক, ভিনেশ ফোগতদের চোখের জলও দেখেছে। প্রশ্ন তাই – মানুষ কি ন্যায়বিচার পাবে না? 

Card image cap

পাই দিবস

বর্তমানে আমরা নানা দিবস পালন করি। পরিবেশ দিবস, নারী দিবস, শিশু দিবস, মাতৃভাষা দিবস, ইত্যাদি। কিন্তু তাই বলে ‘পাই দিবস’! আজ্ঞে হ্যাঁ। গণিতের একটি চিহ্নের সম্মানেও একটি দিবস আছে। - ‘পাই দিবস’। প্রতি বছর ১৪ মার্চ পালিত হয় এই দিনটি। সেই উপলক্ষে এই উপস্থাপনা।

'পাই দিবস' গাণিতিক ধ্রুবক  পাই (π)এর সম্মানে উদযাপনের দিন। পাই-এর মান প্রায় ৩.১৪ বলে প্রতি বছর ১৪ই মার্চ (৩/১৪) পাই দিবস হিসাবে পালিত হয়।

কখনও কখনও ১৪ই মার্চ দুপুর ১টা ৫৯ মিনিটে ‘পাই দিবস’ উদযাপন করা হয়। ঐ দিন দুপুর ১টা ৫৯ মিনিটকে পাই মিনিট নামে আখ্যায়িত করা হয়। দুপুর ১টা ৫৯ মিনিট ২৬ সেকেন্ডকে পাই সেকেন্ড বলা হয়। পাই সেকেন্ডে পাই দিবস পালনের মধ্য দিয়ে পাইয়ের মানের (৩.১৪১৫৯২৬) কাছাকাছি সময়ে দিবসটি উদযাপন করা হয়।

পাই দিবস আপেক্ষিকতার তত্ত্ব প্রদানের জন্য সুখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইনেরও জন্মদিন। এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন আরেক বিশ্ববিখ্যাত পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং।

১৯৮৮ সালে সানফ্রানসিসকোর একটি বিজ্ঞান জাদুঘরে সর্বপ্রথম ‘পাই দিবস’ পালিত হয়। জাদুঘরের বৃত্তাকার স্থানে সংস্থার কর্মচারী ও দর্শনার্থীরা মিলে কেক (পাই) খেয়ে দিনটি উদযাপন করেন। ঐ জাদুঘরের কর্মকর্তা ল্যারি শ এই দিবস উদযাপনের উদ্যোক্তা বলে তাঁকে পাই‌‌-এর রাজপুত্র বলা হয়। ম্যাসাচুসেট্‌স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি  অনেক সময় তাদের নতুন শিক্ষার্থীদের গ্রহণপত্র পাই দিবসে ডাকে (post)দিয়ে থাকে।

Card image cap

মহাকাশ-বিজয়ী প্রথম নারী ভ্যালেন্টিনা তেরেসকোভা

                                                                                                                                                   
……………………………………………………………………………………
আজকের প্রজন্ম তাঁর নাম জানে না। কিন্তু একদিন তিনিই একা পাড়ি দিয়েছিলেন বায়ু-বিহীন, নির্জন পিচ-কালো মহাকাশে। বাবা ছিলেন ট্রাক্টর-চালক; মা ছিলেন বস্ত্র-কারখানার শ্রমিক। তাদের মেয়ে ভ্যালেন্টিনা তেরেসকোভা হলেন মহাকাশ-বিজয়িনী প্রথম নারী। তেরেসকোভার সাফল্য ভারতের মানুষকেও এতটাই প্রভাবিত করেছিল যে বাংলা চলচিত্রেও তাঁর নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে উল্লেখিত হয়েছে। ৬ মার্চ ছিল তাঁর জন্মদিন। তাঁকে নিয়ে একটি ছোট প্রতিবেদন।
……………………………………………………………………………………
ভ্যালেন্টিনা ভ্লাদিমিরোভনা তেরেসকোভা পৃথিবীর প্রথম মহিলা মহাকাশচারী। মহাকাশ অভিযান করা ছাড়াও তিনি একজন প্রযুক্তিবিদ বা ইঞ্জিনীয়ার ছিলেন এবং পরবর্তীকালে রাশিয়ান স্টেট ডুমার সদস্যও হয়েছিলেন। তিনিই মহাশূন্য থেকে ঘুরে আসা আজ পর্যন্ত কনিষ্ঠতম মহিলা। ১৯৬৩ সালের ১৬ জুন ভোস্টক-৬ এ চেপে তেরেসকোভা একাই মহাকাশে গিয়েছিলেন। তেরেসকোভার মহাকাশ-যান ভোস্টক পৃথিবীকে প্রায় ৪৮ বার প্রদক্ষিণ করেছিল। প্রায় তিন দিন মহাশূন্যে কাটিয়েছিলেন তিনি।
তেরেসকোভা মধ্য রাশিয়ার ইয়ারোস্লাভ ওব্লাস্টের অধীনে তুতায়েভস্কি জেলার মাসলেনিকোভো গ্রামে ১৯৩৭ সালের ৬ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। নভেম্বর বিপ্লবের পর তাঁর বাবা-মা বেলারুশ থেকে অভিবাসিত হয়ে রাশিয়াতে আসেন। তেরেসকোভার বাবা ছিলেন একজন ট্রাক্টরচালক এবং মা বস্ত্রশিল্প কারখানার শ্রমিক। যুদ্ধের কারণে একটু দেরীতে দশ বছর বয়সে ১৯৪৫ সালে তেরেসকোভা বিদ্যালয়ে যেতে শুরু করেন। ১৯৫৩ সালে বিদ্যালয় ত্যাগ করে দূরশিক্ষণ পাঠ্যক্রমে শিক্ষালাভ করেন। ১৭ বছরে তিনি স্নাতক হন। সোভিয়েত মহাকাশ প্রোগ্রামের জন্য  নির্বাচিত হবার আগে তেরেসকোভা একটি টায়ার কারখানায় কাজ শুরু করেন; পরে তিনি একটি টেক্সটাইল কারখানার প্রকৌশলী হন। শৈশবকালে তিনি প্যারাসুটের মাধ্যমে আকাশে চড়ার স্বপ্ন দেখতেন। ভারতের মতো একটি পুঁজিবাদী দেশে সেই স্বপ্ন হয়ত অধরাই থেকে যেত। একটি শ্রমিকের পরিবারের মেয়ে আকাশে উড়বে! বিমান চালাবে! ভাবাই যায় না। অত অর্থ কোথায়? সময়ই বা কই? কিন্তু সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন সকল প্রতিভাকে বিকাশের সুযোগ দিয়েছিল। তেরেসকোভা কাজের ফাঁকে ফাঁকে স্থানীয় বিমানচালনা ক্লাবে স্কাইডাইভিং-এ প্রশিক্ষণ নেন। ২২ বছর বয়সে ২১শে মে, ১৯৫৯ সালে তিনি প্রথম স্কাই-ডাইভ করেন। ততদিনে অবশ্য সোভিয়েত ইউনিয়নে্র মহাকাশ অভিযান শুরু হয়ে গিয়েছে। ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর সমগ্র দুনিয়াকে বিস্মিত করে মহাকাশে পাড়ি দেয় স্পুটনিক। তারপর একে একে মহাকাশে নন-ম্যানড মিশন চালায় বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক দেশটি। 
স্কাই-ডাইভিং-এ অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান তেরেস্কোভাকে নভোচারী হিসেবে যোগ দিতে ব্যাপকভাবে সহযোগিতা করেছিল। তিনি কসমোনাট কর্পসের অংশ হিসাবে সোভিয়েত বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন এবং প্রশিক্ষণ শেষ করে অফিসার হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেন। ১৯৫৯ সালে মহিলা মহাবিদ্যালয়ের প্রথম দলটি মহাকাশ-কর্মসূচী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও, তেরেসকোভা মহাকাশচারী শিক্ষার্থী হিসাবে মহাকাশ প্রোগ্রামে থেকে যান। পরে তিনি ঝুকভস্কি এয়ার ফোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং একাডেমি থেকে স্নাতক হন এবং মহাকাশে যাত্রার জন্য যোগ্যতা অর্জন করেন। ৪০০ জনের মধ্য থেকে নির্বাচিত হন তেরেসকোভা। এরপর চলে ১৮ মাসের কঠোর প্রশিক্ষণ।
তারপর এল সেই ঐতিহাসিক দিন। ১৬ জুন, ১৯৬৩। ভোস্টক-৬ মহাকাশ-যানে করে বৈকানুর উৎক্ষেপণ-কেন্দ্র থেকে তিনি একাই পাড়ি দিলেন মহাকাশে। ৭০ ঘন্টা তিনি মহাকাশে কাটান। মহাকাশে অবশ্য তখন তিনি একা ছিলেন না। ১৪ জুন (১৯৬৩ খ্রীঃ) ভোস্টক-৫-এ করে মহাকাশে পৌঁছেছেন ভ্যালেরি ভাইকোভস্কি। দুটি ভিন্ন পথে তাঁরা রওনা হলেও দূরত্ব কমিয়ে পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাত্র তিন কিলোমিটার ব্যবধানে চলে আসেন। তেরেসকোভা মহাকাশে ভাইকোভস্কির সঙ্গে বেতার-মাধ্যমে যোগাযোগ করেন এবং ‘সীগাল’ নামে কথাবার্তা চালান। মহাকাশ-যান থেকে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও কথা বলেন। সোভিয়েত টেলিভিশন ক্যাপসুলে করে তেরেসকোভার মহাকাশ অভিযান সম্প্রসারিত করেছিল। 
প্রসঙ্গতঃ পৃথিবীর প্রথম মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিনও ছিলেন একজন সোভিয়েত নাগরিক। ১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল তিনি মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিলেন এবং পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করেছিলেন। গ্যাগারিনের দুই বছর পরে মহাকাশে যান ভ্যালেন্টিনা তেরেসকোভা। দ্বিতীয় মহিলা মহাকাশচারীও একজন সোভিয়েত নাগরিক ছিলেন। তাঁর নাম স্বেতলানা সাভিৎস্কায়া। তেরেসকোভার ১৯ বছর পর ১৯৮২ সালে স্বেতলানা মহাকাশে যান। তিনি দুই বার মহাকাশ অভিযান করেন এবং বিশ্বের প্রথম মহিলা হিসেবে স্পেসওয়াক করেন। 
তবে তেরেসকোভা ১৯৬৩ সালের পরে আর কখনো মহাকাশে যাননি। ১৯৯৭ সালে তিনি মেজর জেনারেল পদমর্যাদা অর্জন করে বিমান বাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। মহাকাশ অভিযানের সাথে সাথে ১৯৬১ সালে তিনি স্থানীয় কমসোমল বা যুব কমিউনিস্ট লীগে যোগ দেন। পরবর্তীকালে সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন। সোভিয়েত নারী সমিতির পরিচালক নিযুক্ত হন ১৯৬৮ সালে। তেরেসকোভা ১৯৬৬ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত সুপ্রিম সোভিয়েতের প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দফতর নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির  বিশিষ্ট সদস্য ছিলেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরে তিনি ১৯৯৫ ও ২০০৩ সালে দুবার জাতীয় রাজ্য ডুমার কাছে নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে তার আঞ্চলিক সংসদ, ইয়ারোস্লাভল ওব্লাস্ট ডুমার হয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন তেরেসকোভা। ২০১১ সালে তিনি সংযুক্ত রাশিয়া দলের সদস্য হিসাবে জাতীয় রাজ্য ডুমায় নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং ২০১৬ ও ২০২১ সালে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবনে ১৯৬৩ সালের ৩ নভেম্বর আন্দ্রিয়ান জি. নিকোলায়েভ নামের একজন নভোচারীকে বিয়ে করেন তেরেসকোভা। তাঁদের একটি কন্যা আছে। তেরেশকোভা "সোভিয়েত ইউনিয়নের বীর" উপাধি এবং দুবার ‘অর্ডার অব লেনিন’ পুরস্কারেও ভূষিত হন। ইউরি গ্যাগারিন ১৯৬৮ সালের ২৭ মার্চ মাত্র ৩৪ বছর বয়সে একটি বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হলেও এই অসামান্যা মহিলা ৮৭ বছর বয়সে আজও জীবিত আছেন। 
পরবর্তী সময়ে আমেরিকান মহাকাশ সংস্থা নাসা অনেক মহাকাশ অভিযান করলেও একথা উল্লেখ করা প্রয়োজন যে জার আমলের দুর্দশাগ্রস্ত শত শতাব্দী পিছিয়ে থাকা রাশিয়া ১৯১৭ সালে বিপ্লবের পর জ্ঞানে-বিজ্ঞানে-সাহিত্যে-শিল্পে-ক্রীড়াক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি লাভ করে। সোভিয়েত ইউনিয়নই প্রথম মহাকাশ অভিযান করে, মানুষ পাঠায়। সোভিয়েত ইউনিয়নে নারীরা শিক্ষায় ও মর্যাদায় কোন স্তরে উন্নীত হয়েছিল তার উল্লেখযোগ্য প্রমাণ হলেন ভ্যালেন্টিনা তেরেসকোভা।

Card image cap

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় মাথা হেঁট করলেন না


…………………………………………………………………………………
রবীন্দ্র-শরৎ-নজরুল উত্তর যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক তিনি। গণদেবতা, হাঁসুলি বাঁকের উপকথা, আরোগ্য-নিকেতনের মত উপন্যাসের কথা আজ ক’জন পড়ে! কিন্তু এই অসামান্য সৃষ্টিগুলিকে বাদ দিয়ে বাংলা সাহিত্য হয় না। তিনি যেমন ছিলেন একজন গুণী সাহিত্যিক, তেমনই ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি উঁচু মূল্যবোধের সাক্ষ্য রেখে গিয়েছেন, যা অনুসরণীয়। তারই স্মৃতিচারণা। 
……………………………………………………………………………………

রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, “সত্যমূল্য না দিয়েই সাহিত্যের খ্যাতি করা চুরি / ভালো নয় ভালো নয়, নকল সে সৌখিন মজদুরি।“ সাহিত্যে যা বলব, নিজের জীবনের সঙ্গে তার মিল থাকবে না? তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়  তাই কোনো কিছুর পরোয়া না করেই জেলে চলে গেলেন। তিনি নিজেই একদিন "গণদেবতা"-র নায়ক হয়ে গেলেন! সেইসময় স্বাধীনতা আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। শ্লোগান উঠেছে - ‘ইংরেজ তুমি ভারত ছাড়।‘ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ও সক্রিয়ভাবে সেই “ভারত ছাড়ো আন্দোলনে” যুক্ত হয়ে পড়লেন। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের তখন লেখক হিসাবে নামডাক হয়েছে। তাঁকে অনেক সাহিত্যিক  বারণ করছেন,  প্রত্যক্ষ আন্দোলনে জড়িয়ে না পড়তে। বিখ্যাত সাহিত্যিক শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় ছিলেন তারাশঙ্করের বন্ধু। তিনিও তাঁকে বারবার সাবধান করছেন, এভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ো না। ভুল করছো। বিপদে পড়বে। আমরা লেখক। এসব আমাদের কাজ নয়।
তারাশঙ্কর হেসে বললেন,  দ্যাখো আমি জীবন আর সাহিত্যকে আলাদা করে দেখি না। গল্প - উপন্যাসে ভাল ভাল কথা বলবো, কিন্তু নিজের জীবনের ক্ষেত্রে সেটা মানবো না? তা কী করে সম্ভব? 
অবশেষে তারাশঙ্করকে একদিন লাভপুরের এক গোপন ডেরা থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করল।
বিচার হবে। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তারাশঙ্কর। এস ডি ও ছিলেন মণি সেন। এস ডি ও তারাশঙ্করের খুব ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন। এস ডি ও তারাশঙ্করকে বারবার অনুরোধ করলেন, আপনি একবার শুধু বলুন, আপনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন। এসব নোংরা কাজ আর করবেন না। তাহলে আমি আপনাকে ছেড়ে দেবো।
তারাশঙ্কর বললেন,  দেশকে আমি ভালবাসি। আপনি একে নোংরা কাজ বলছেন! ছিঃ! 
তারাশঙ্কর মাথা হেঁট করলেন না। বিচারে এক বছরের জেল হ'লো।
জেল থেকে একদিন মাথা উঁচু করে বেরিয়ে এলেন তারাশঙ্কর। "জ্ঞানপীঠ" পুরস্কারে সম্মানিত  উপন্যাস   "গণদেবতা"-র অন্যতম  নায়ক দেবু পণ্ডিতের মত। আজকাল এরকম মেরুদণ্ড সোজা রাখা সাহিত্যিক কোথায়? 

Card image cap

গ্রেটা থুনবার্গ

‘'গত ৩০ বছর ধরে বিজ্ঞানের কাছে বিষয়টি একদম পরিস্কার। কিন্তু হাউ ডেয়ার ইউ? কোন স্পর্ধায় আপনারা দেখেও না দেখার ভান করছেন? আমার তো এখানে থাকার কথা নয়। আমার তো স্কুলে থাকার কথা। অথচ আপনারা আমাদের ইয়ং ছেলেমেয়েদের কাছে আসছেন আশা দেখানোর জন্য? আপনারা আমাদের স্বপ্ন চুরি করেছেন। আমাদের ছোটবেলা চুরি করেছেন। মানুষ মারা যাচ্ছে। পুরো ইকো সিস্টেম ধ্বসে পড়ছে। আমরা এক মহাবিলুপ্তির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। আর আপনারা কথা বলছেন টাকা নিয়ে, রূপকথার সাম্রাজ্য নিয়ে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সমস্ত চোখ আপনাদের দিকে। আর আপনারা যদি আমাদের স্বপ্ন চুরমার করে দেন আমি কথা দিচ্ছি আমরা কেউ আপনাদের ক্ষমা করব না।ক্সক্স নিউইয়র্কে রাষ্ট্রসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সম্মেলনের মঞ্চে এই কথাগুলোই বলেছিলেন বছর ষোলোর কিশোরীটি। সেটা ছিল ২০১৮ সালের ডিসেম্বর। তারপর ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে দাভোসে আয়োজিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামক্স-এর মঞ্চে আরও একবার এই অকুতোভয় ছোট্ট মেয়েটি রাষ্ট্রনেতাদের চোখে চোখ রেখে জানিয়ে এসেছিলেন, ‘‘মুখে বড় বড় কথা নয়, এই পৃথিবীকে ‘শিশুর বাসযোগ্যক্স করে যেতে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে রাষ্ট্রনেতাদের। না হলে অদূর ভবিষ্যতে গোটা মানবসভ্যতাই সংকটের মধ্যে পড়ে যাবে। ভবিষ্যতের বিষয়ে যত্নবান হওয়ার জন্য রাষ্ট্রনেতাদের কাছে আর্জি জানাতে আসিনি আমরা। অতীতেও ওঁরা আমাদের উপেক্ষা করেছিলেন। এবারও তাঁরা সেটাই করবেন। আমরা এখানে তাঁদের এটাই বলতে এসেছি যে, পরিবর্তন আসছে। তা তাঁদের পছন্দ হোক, বা না হোক।ক্সক্স শুধু যে সেখানে দাঁড়িয়েই গ্রেটা আলটপকা কথা বলে ফেললেন তা একেবারেই নয়; এর প্রস্তুতি বহু আগে থেকেই। গ্রেটা থুনবার্গ সুইডেনের একজন স্কুল-শিক্ষার্থী। মাত্র ১৫ বছর বয়সে গ্রেটা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অবিলম্বে কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করার জন্য আন্দোলনে নামেন। ২০১৮ সালে গ্রেটা স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দেন এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধে জরুরি পদক্ষেপের দাবিতে সুইডিশ পার্লামেন্টের সামনে একাই প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে যান। তারপরই স্টকহোমের অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও গ্রেটার সঙ্গে যোগ দিতে থাকে। তারা সম্মিলিতভাবে শুক্রবারকে ঘোষণা করে ‘ফ্রাইডে ফর ফিউচারক্স হিসাবে। এই ছেলেমেয়েদের আন্দোলন এখন সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে গিয়েছে। ‘‘আমাদের দেশের মতো ধনী দেশগুলোর ভোগবিলাসের জন্য পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পৃথিবী জেগে উঠছে, বদল আসছে। সে আপনাদের ভালো লাগুক আর নাই লাগুক।ক্সক্স রাষ্ট্রপুঞ্জের পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে বলেন গ্রেটা। গ্রেটা জানেন যে কৃত্রিম উপগ্রহের পাঠানো গত ৫০ বছরের ছবি প্রমাণ করে দিয়েছে সবচেয়ে বেশি অরণ্য ধ্বংস হয়েছে উন্নত দেশগুলিতে। মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী উন্নত দেশগুলিই। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি কষ্ট করছে দরিদ্র দেশের মানুষগুলো। ‘‘আমি আর অপ্রিয় হওয়ার ভয় পাই না। আমার কাছে ক্লাইমেট জাস্টিস মুখ্য। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমরা পৃথিবীর ষষ্ঠ মহাবিলুপ্তির মুখোমুখি। বাস্তুতন্ত্রগুলো ভেঙে পড়ছে। আমরা এক গণবিলুপ্তির মুখোমুখি।ক্সক্স গ্রেটার সতর্কবার্তা। ২০১৯ সালের ১৫ই মার্চ ১১২টি দেশের আনুমানিক ১.৪ মিলিয়ন শিক্ষার্থী তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে জলবায়ু প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে। বিষয়টি নজরে পড়ে রাষ্ট্রনেতাদেরও। এরপরেই জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি উপেক্ষা না করার জন্য রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে আবেদন জানান তিনি। আন্দোলনের বার্তা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। স্বনামধন্য অনেকেই এই ছোট্ট মেয়েটির আন্দোলনের সমর্থনে এগিয়ে আসেন। গ্রেটা থুনবার্গ তাঁর এই কার্যক্রমের জন্য অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে নরওয়ের তিনজন সংসদ সদস্য তাঁকে ‘শান্তিতে নোবেল পুরস্কারেরক্স জন্য মনোনীত করেন। মনোনয়নের খবর পেয়ে টুইটারে গ্রেটা লিখেছেন, ‘‘এই মনোনয়নের জন্য আমি সম্মানিত ও কৃতজ্ঞ। আমরা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য স্কুল স্ট্রাইক শুরু করেছি; যতদিন করতে হয় ততদিন করে যাব আন্দোলন।ক্সক্স গ্রেটা থুনবার্গ সুইডেনের বাসিন্দা। তাঁর জন্ম ২০০৩ সালের ২ জানুয়ারি। তাঁর পিতা হলেন অভিনেতা স্ভান্তে থুনবার্গ, মাতা মালেনা এরম্যান একজন অপেরা শিল্পী। তাঁর ঠাকুর্দা ওলফ থুনবার্গ একজন অভিনেতা ও পরিচালক। ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে গ্রেটা প্রথম টিইউডিএক্স আলোচনায় বলেন যে তিনি ৮ বছর বয়সে প্রথম জলবায়ু পরিবর্তনের কথা শুনতে পান। কিন্তু তিনি বুঝতে ব্যর্থ হন কেন এই বিষয়ে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। ১১ বছর বয়সে তিনি হতাশ হয়ে পড়েন এবং কথা বলা একদম বন্ধ করে দেন। পরবর্তীকালে তাকে বেশ কিছুদিন উত্তমরূপে চিকিৎসা করানো হয়। তিনি আলোচনায় বলেন তাঁর ডিসঅর্ডারগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল তিনি যখন প্রয়োজন অনুভব করতেন শুধুমাত্র তখনই কথা বলতেন। তিনি বলেন, ‘‘আমার অনেকটা এমন মনে হচ্ছিল যে আমি যদি এই সম্পর্কে প্রতিবাদ না করি তাহলে ভিতরে ভিতরে মারা যাব।ক্সক্স তাঁর পিতা তাঁর বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করাকে একদম মেনে নিতে পারেননি; কিন্তু তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমার মেয়ে ঘরে অখুশিভাবে বসে থাকতে পারে, অথবা যদি চায় তবে সে বাইরে গিয়ে প্রতিবাদও করতে পারে।ক্সক্স অর্থাৎ তিনি তাকে বাধা দেবেন না। গ্রেটা কার্বনের প্রভাব কমাতে তাঁর পরিবারের সকল সদস্যকে বোঝাতে সক্ষম হন ও বিমানে চড়ে ভ্রমণ করাকে বাদ দিতে বলেন। গ্রেটা নিজেও এগুলো করেন না। এত কম বয়সে গ্রেটার নেতৃত্বদানের ক্ষমতা নজর কেড়েছে গোটা বিশ্বের। প্রভাবশালী ‘টাইমক্স ম্যাগাজিনের বিচারে গত বছর কম বয়সী প্রভাবশালীদের তালিকায় ছিলেন তিনি। মূলতঃ শিক্ষার্থী ও যুবদের পরিবেশ রক্ষার কাজে উদ্বুদ্ধ করেন গ্রেটা। পরিবেশ সচেতনতার উদ্দেশ্যে স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আন্দোলনেও নেমেছেন তিনি। পোল্যান্ড ও দাভোস ফোরামে রাষ্ট্রসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনের সম্মেলনে বক্তব্য রাখার পর সারা বিশ্বে অনেক স্কুল পড়ুয়ার জন্য উদাহরণ হয়ে ওঠেন গ্রেটা থুনবার্গ। আমাদের দেশে দিল্লি ও উত্তর ভারতের বায়ু দূষণ এই মুহূর্তে সংবাদ শিরোনামে। সমস্যা শুধু স্বাস্থে্যর নয় সমগ্র অর্থনীতির। সম্প্রীতি ‘নেচারক্স পত্রিকায় প্রকাশিত একটি রিপোর্ট বলছে অত্যাধিক কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিশেষ করে ভারতে অর্থনৈতিক বিকাশ এবং শ্রমের উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে। প্রসঙ্গতঃ কানাডা, জার্মানি, নিউজিল্যান্ড বা ব্রিটেনের মত উন্নত দেশগুলিতে প্রতি ইউনিট কার্বন নির্গমনে এই হার মাত্র ০.১% কমবে, কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উৎপাদনশীলতার হার কমতে পারে তিন থেকে পাঁচ শতাংশ; বলছেন কনকার্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। ২০১৮-য় সারা পৃথিবী জুড়ে ৪০ বিলিয়ন মেট্রিক টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন হয়েছে, যা থেকে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে বিশ্ব জিডিপির দুই শতাংশ। তবে বলা হচ্ছে নিম্ন আয়ের দেশগুলিতে এই ক্ষতির পরিমাণ উচ্চ আয়ের দেশগুলি থেকে অন্তত নয় গুণ বেশি হবে! কিন্তু এসব কথা শুনছে কি কেউ? ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সতর্ক করেন গ্রেটা। চাঁচাছোলা ভাষায় প্রধানমন্ত্রীর নাম করে তিনি সাফ বলেন, ‘‘প্রিয় মিস্টার মোদি, শুধু আলোচনায় কাজ হবে না। আপনাকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।ক্সক্সগ্রেটার এই আন্দোলনের প্রশংসা করেছে ইউ.এন. উইমেন্সও। তাঁরা টুইট করেছেন  সুরক্ষিত ভবিষ্যতের লক্ষ্যে যুব সম্প্রদায়ের কথা শোনাটা যে কত জরুরী সেটা প্রমাণ করেছে ও। তবে খ্যাতির পাশাপাশি বিস্তর সমালোচনাও হচ্ছে গ্রেটাকে নিয়ে। ব্রিটেন এবং অস্টে্রলিয়ার মতো দেশ গ্রেটার এই আন্দোলনের নিন্দা করেছে। সমালোচকদের দাবি পড়াশোনা ছেড়ে এভাবে আন্দোলন করাটা ভুল। ভ্রান্ত নীতির দ্বারা পরিচালিত স্কুল পড়ুয়াদের প্রশংসা করাটাও স্নেহশীলতার আতিশয্য ছাড়া আর কিছুই নয়। যদিও যাবতীয় সমালোচনার উত্তর নিজের চেনা মেজাজেই দিয়েছেন গ্রেটা। বলেছেন, ‘‘যাঁরা আমাদের স্কুলে ফেরত পাঠাতে চান, তাঁদের বলতে চাই কোন পার্থক্য গড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা সত্যিই খুব ছোট। কিন্তু আমাদের আন্দোলন প্রতিদিনই কলেবরে বাড়ছে। এই গ্রহে যতটুকু রসদ বেঁচে আছে সেটাই সুষ্ঠুভাবে ব্যবহারের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। আমাদের দাবি একটাই। ভারী ভারী বিজ্ঞানের কথা না বলে সেগুলোকে মন দিয়ে শুনুন। তারপর সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করুন।ক্সক্স গত আগস্টে গ্রেটা সম্পূর্ণ নবীকরণযোগ্য শক্তিচালিত ইয়টে চড়ে নিউইয়র্ক পাড়ি দেন। কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় আনতে এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যক্তিগত উদ্যোগগুলির একটি। উল্লেখযোগ্য এই অভিযান গ্রেটা আয়োজিত এক শুক্রবারের বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের পর অনুষ্ঠিত হয়। নিউইয়র্কে ডোনাল্ড ট্রাম্পের চোখে চোখ রেখে গ্রেটা তাকিয়েছিলেন - সেই ছবি মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। ট্রাম্প তাঁকে বিদ্রুপ করে একটি টুইট করেন, যার সারমর্ম গ্রেটা একজন হাসিখুশি বাচ্চা মেয়ে (হ্যাপি ইয়ং গার্ল)। অবশ্য তাতে আর কারই বা কী আসে যায়? কিন্তু প্রশ্ন একটা থেকেই যায়। এই হাসিখুশি বাচ্চা মেয়েটা যদি পারেন, আমরা প্রতিবাদ করতে পারছি না কেন? কবে পারবো?!

Card image cap

২৩ মার্চ ভগৎ সিং -এর শহীদ দিবস

২৩ শেষ মার্চ ১৯৩১ বেলা ১১টা, জেলের মধ্যে শেষবারের মতো পরিবারের সাথে দেখা হল ভগৎ সিং এর। ফাঁসির দিন ঠিক ছিলো ১৯৩১ সালের ২৪শে মার্চ। সেইমতো জেলের মধ্যেই ভগৎ সিং এর আত্মীয়রা দেখা করতে এসেছে। একে একে এগিয়ে এলেন বাবা কৃষাণ সিং, দিদি অমর কউর, দুই ভাই - কুলবির ও কুলতার। সবশেষে দেখা হল মা ও ছেলের। বিদ্যাবতী দেবী লোহার গারোদের ফাঁক দিয়ে ভগৎ সিং এর সারা গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে অশ্রু সজল কণ্ঠে বললেন- "ভগনওয়ালা ! কিছুতেই তোমার আদর্শ বিসর্জন দিওনা। মনে রেখো, একদিন না একদিন সকলকেই মরতে হবে। কিন্তু যে মৃত্যু দুনিয়ার মানুষকে নাড়া দিয়ে যায় সেই মৃত্যু তো সব থেকে মহান। আমি এইভেবে গর্বিত যে একটা বড় ও মহান আদর্শের জন্য আমার 'ভগনওয়ালা' আত্মোৎসর্গ করেছে, আমি ভগৎ সিং -এর মা। তোমার কাছে আমার একটাই কেবল ভিক্ষা আছে। আমি চাই আমার ছেলে ফাঁসির দড়ি গলায় নিয়ে দীপ্ত কণ্ঠে বলবে 'ইনকিলাব জিন্দাবাদ'। আমার ছেলের ওজন ফাঁসির আদেশ শুনে বেড়ে যাবে কমবে না।" - ভগৎ সিং হাসিমুখে উত্তর দিয়েছিলেন - "তুমি যা বলছ তাই হবে মা"। যদিও সকলের অগোচরে ভগৎ সিং এর ফাঁসির দিন এগিয়ে এনেছিল ব্রিটিশ সরকার। কারণটি সংক্ষেপে এই রকম- ১৯৩১ সালের ২৪ শে মার্চ করাচীতে জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশন বসার কথা ছিল। ইতিমধ্যেই দেশের অভ্যন্তরে প্রবল দাবি উঠেছে এই মহান বিপ্লবীদের ফাঁসির রদ করবার জন্য বড়লাট লর্ড আরউইনের সাথে দেখা করুক গান্ধীজি। সুভাষচন্দ্র সদ্য জেল থেকে মুক্তি পেয়ে গান্ধীজিকে একান্তভাবে একই অনুরোধ করেছেন। সুভাষচন্দ্র সহ অনেক দেশ নেতাদের বক্তব্য গান্ধী-আরউইন চুক্তির অন্যতম শর্তই হোক এই বিপ্লবীদের মুক্তি।গান্ধীজী বড়লাটের সাথে দেখা করলেন অনেক বিষয়ের মাঝে এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে তিনি বড় লাটকে বললেন না। উল্টে তিনি বললেন ওই দিন করাচীতে কংগ্রেসের অধিবেশন, ওই একই দিনে যেন ভগৎ সিংদের ফাঁসি না দেওয়া হয়। গান্ধীজীর এই সাক্ষাতের পর দেশবাসীর আশা ছিল ভগত সিং সহ বিপ্লবীরা মুক্তি পাবে। কিন্তু ঘটলো ঠিক উল্টো, ব্রিটিশ সরকার ফাঁসির দিন পরিবর্তন করে ২৩ শে মার্চ ঠিক করল। এই সিদ্ধান্ত ভগৎ সিং দের সরকারি ভাবে জানানো হলো ২৩ শে মার্চ বিকেল পাঁচটার পরে। প্রস্তুত হও। আর মাত্র আড়াই ঘন্টা। - আড়াই ঘণ্টা কেন এখনই নিয়ে চলো না ! আমরা তো প্রস্তুত আছি সহাস্যে বলেছিলেন ভগৎ সিং। সাধারণত ফাঁসির দন্ডাদেশ কার্যকর করা হতো ভোর বেলায়। সেই প্রথা ভেঙে সন্ধ্যেবেলায় ভগৎ সিং, রাজগুরু এবং শুকদেব কে নিয়ে আসা হল ফাঁসির মঞ্চের সামনে। সেই শেষের সময়টা কিভাবে কাটিয়েছিলেন বিপ্লবীরা? মাকে দেওয়া কথা ভগৎ সিং রাখতে পেরেছিলেন? সন্ধ্যা ৭:২২ মিনিটে তিন জন মিছিল করে যাত্রা শুরু করলেন ফাঁসির মঞ্চের দিকে। ডাইনে রাজগুরু, মাঝে ভগত সিং এবং বামে সুকদেব। তারা উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করলেন 'বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক' - 'ইনকিলাব জিন্দাবাদ'। - হতচকিত হয়ে পড়ল জেলের কয়দিরা। তারা বুঝতে পারল বিপ্লবীরা চলেছে বধ্যভূমির দিকে। জেলে আটক সমস্ত বিপ্লবীরা ভগৎ সিং এর সাথে গলা মিলিয়ে জানান দিল ইনকিলাব জিন্দাবাদ। জেলের অপর সমস্ত কয়েদিরাও একইভাবে উচ্চ কন্ঠের স্লোগানে মুখরিত করে তুললো জেলের আকাশ বাতাস। তখন জেলে শোনা যাচ্ছে একটাই সুউচ্চ কণ্ঠস্বর ইনকিলাব জিন্দাবাদ - বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক। - সেই চরম মুহূর্তে ভগত সিং পরিহাস করে ডেপুটি কমিশনার কে লক্ষ্য করে বললেন- 'ইউ আর ভেরি লাকি'। - উত্তরে ডেপুটি কমিশনার বলেছিলেন- হুয়াই ? - আজ তুমি দেখতে পাবে ভারতের বিপ্লবীরা আদর্শের জন্য কিভাবে হাসিমুখে মৃত্যুবরণ করতে পারে। তারপর তারা এগিয়ে গেলেন বদ্ধভূমির দিকে - মুখের কালো কাপড় ছুড়ে ফেলে দিয়ে হাসিমুখে সেই দড়িকে চুম্বন করলেন। ভগৎ সিং বলেছিলেন - "সুন্দর এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা আমার ছিল একথা গোপন করতে আমি চাইনা। কিন্তু আমার বেঁচে থাকার একটি শর্ত আছে। কারারুদ্ধ, শৃঙ্খলিত জীবন আমি বহন করতে ইচ্ছুক নই।... আজ আমি সানন্দে, হাসিমুখে এমনভাবে ফাঁসির রজ্জুকে বরণ করতে চাই, যা দেখে ভারতের ঘরে ঘরে মায়েরা প্রার্থনা করবে তাদের সন্তান যেন ভগৎ সিং এর মত হয়ে ওঠে। আমার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে দেশের স্বাধীনতা বেদি মূলে আত্মদান করতে এত বিপুলসংখ্যক মানুষ এগিয়ে আসবে যে সাম্রাজ্যবাদ তার সমস্ত দুষ্ট শক্তি প্রয়োগ করেও বিপ্লবের অগ্রগতিকে রুখতে পারবে না।" তথাকথিত ব্রিটিশ সিংহের ভয় ছিল ভগৎ সিং দের মৃত দেহ কেও। তাই পরিজনদের হাতে তা তুলে না দিয়ে রাতের অন্ধকারে লোক চক্ষু আড়ালে শতদ্রু নদীর তীরে পেট্রোল ঢেলে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় তাদের মৃতদেহ। দেশমাতৃকাকে স্বাধীন করতে ফাঁসির মঞ্চে প্রাণ বিসর্জন সেই সময়ে এদেশে স্বাভাবিক ঘটনা ছিল। এই দামাল ছেলেদের দেখেই কবি বলেছিলেন- উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, "ভয় নাই, ওরে ভয় নাই- নিঃশেষে প্রাণ কে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।'' এদেশের তরুণ প্রজন্মের এই বাণীকে সত্য প্রমাণ করতে এতোটুকু পা কাঁপেন। কিন্তু শহীদ-ই- আজম ভগত সিংয়ের ফাঁসির ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেদিন সারাদেশে প্রচন্ড বিক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল - যা ইতিপূর্বে এত ব্যাপক আকারে লক্ষ্য করা যায়নি। এই বিক্ষোভের আঁচ থেকে গান্ধীজি ও রেহাই পাননি সেদিন। ব্রিটিশ সরকারের শত চেষ্টা সত্ত্বেও ২৪ শে মার্চ শতদ্রু নদী তীরে লক্ষ মানুষ সমবেত হয়, বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে। তারা শহীদ ভগত সিং, রাজগুরু, শুকদেবের নামে জয়ধ্বনি দিয়ে মিছিল সংগঠিত করে। একটা ধুমকেতুর মতো ভগৎ সিং ভারতবর্ষের রাজনৈতিক আঙ্গিনায় আবির্ভূত হয়েছিলেন। মাত্র ২৪ বছর বয়সে তার ফাঁসি হয়। কিন্তু কোটি কোটি দেশবাসীর দৃষ্টি ছিল তার উপরে নিবন্ধ। ভগৎ সিং তাদের সামনে হাজির করেছিলেন স্বাধীনতার ভিন্ন এক দিক নির্দেশ।

Card image cap

স্বাধীনতা সংগ্রামী শহীদ সুখদেব থাপার

ভগৎ সিং এর নাম উচ্চারিত হলে তাঁর নামটাও চলে আসে।দুজন দুই রাজ্যে জন্মেছিলেন। বলতে চাইছি সুখদেব এর কথা ।সুখদেব থাপার। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুষ্টিমেয় যে কজন নিঃশব্দে ফাঁসির দড়িকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম সুখদেব।মৃত্যুর পূর্বমুহুর্তে ভগত সিং এর সাথে গলা মিলিয়ে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে আওয়াজ তুলেছিলেন “ইনকিলাব জিন্দাবাদ"। বর্তমান প্রজন্মের সাথে পরিচয় ঘটাতেই এ লেখার অবতারণা। সুখদেব থাপার ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের একজন শহিদ। তিনি শহীদ ভগৎ সিংহের এক অনন্য বন্ধু হিসাবেও পরিচিত। বিপ্লবী সুখদেব জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯০৫ সালের ১৫ মে পাঞ্জাবের লুধিয়ানা শহরে। সুখদেবের বাবার নাম ছিল শ্রী রামলাল থাপার। তাঁর জন্মের তিন মাসে আগেই তাঁর পিতার মৃত্যু হয়।সুখদেবের লালন পালন তার কাকা শ্রী অচিন্তরাম থাপার-এর কাছেই হয়। সুখদেবের জন্মের সময় তার কাকা অচিন্ত্যরাম জেলে সাজা খাটছিলেন। এক বিপ্লবী বাতাবরণে সুখদেব বড়ো হচ্ছিলেন। সুখদেব যখন তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র , গভর্নর তার বিদ্যালয়ে আসে। প্রধান শিক্ষকের আদেশে ছাত্ররা সবাই গভর্নর কে স্যালুট করে, কিন্তু সুখদেব তা করেনি। তখন সুখদেবকে জিজ্ঞাসা করা হল কেন সে গভর্নরকে স্যালুট করল না, সুখদেব পরিষ্কার বলে দিল, সে কোনো ইংরেজকে স্যালুট করবে না। ১৯২৮ সালের ৮ অগাস্ট প্রতিষ্ঠিত হয় “হিন্দুস্তান সোসালিস্ট রিপাবলিকান আর্মি(HRSA)।সুখদেব ছিলেন এই দলের পাঞ্জাব শাখার প্রধান কর্মকর্তা। এখানেই তাঁর সাথে ভগত সিং এর আলাপ ও ঘনিষ্ঠতা হয়। ভগৎ সিং এর তুলনায় সুখদেব পড়াশুনা কম করতো। কিন্তু তাঁর স্মৃতিশক্তি খুব তীক্ষ্ণ ছিল। বিপ্লবী কাজ পরিচালনার জন্য তাঁরা একটা বাড়ী ভাড়া নিল। দিনের বেলায় বাইরে থাকত আর রাত করে ফিরত। এভাবেই বাড়ির মালিক ও আশপাশের লোকজনের সন্দেহ হলো। এই কারণে সুখদেব নিজের মাকে সেই বাড়িতে নিয়ে এলো। এবার কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে, সে উত্তর দিত সে কাজ করে, অনেক দূরে রাস্তার কাজ চলছে। দিন-রাত কাজ করে বাড়ি আসতে দেরি হয়। সুখদেব ছিলেন সাহসী এবং দৃঢ় চিত্তের মানুষ। লাহোরে যখন বোম বানানোর কাজ শুরু হল, তখন সে ফিরোজপুর থেকে বোমের মশলা নিয়ে আসতেন। একবার মশলা আনতে গিয়ে সিপাহীদের খপ্পরে পড়ে গেছিল। এর ফলে সুখদেবকে অনেক মার খেতে হয়েছে। সুখদেব চুপচাপ মার খেতে থাকে, কিন্তু কিছু বলেননি, কারণ তার কাছে পিস্তল, কার্তুজ আর বোম বানানোর মশলা ছিল। ১৯২৮ সালে সাইমন কমিশনের বিরোধিতা করতে গিয়ে লাঠিচার্জে লালা লাজপত রায় মারা যান, তখন সুখদেবরা লালা লাজপত রায় এর হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯২৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভগৎ সিং,শুকদেব ও রাজগুরু ভুলবশত পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট স্যান্ডার্সকে হত্যা করেন। এই ঘটনাটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল ।এই ঘটনার কয়েকমাস পর ভগৎ সিং,শুকদেব ও রাজগুরু গ্রেপ্তার হন। স্যান্ডার্স হত্যার মামলাটি 'লাহোর ষড়যন্ত্র' নামে পরিচিত। বিচারে ভগৎ সিং, সুখদেব ও রাজগুরু কে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ১৯৩১ সালের ২৩ শে মার্চ, বিপ্লবীরা ফাঁসি এই তিন বিপ্লবীর ফাঁসী হয়। ফাঁসির সময় সুখদেবের বয়স ছিল মাত্র ছাব্বিশ বছর।লাহোর কারাগারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পরে শিবরাম রাজগুরু, ভগত সিং এবং সুখদেব থাপারের মরদেহ চরম গোপনীয়তায় দাহ করা হয়। ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য আত্মাহুতি দেওয়া এই তিনজন বীর শহীদের স্মৃতিসৌধ ভারতের পাঞ্জাবের ফিরোজপুর জেলার শতদ্রু নদীর তীরে হুসেইনিওয়ালা গ্রামে অবস্থিত। প্রতি বছর ২৩ শে মার্চ তাঁদের মৃত্যুর দিনটিকে স্মরণে রেখে শ্রদ্ধার সাথে "শহীদ দিবস" উদযাপিত হয়।

Card image cap

সর্বকালের শ্রেষ্ঠ গোলকিপার লেভ ইভানোভিচ ইয়াসিন‌

ফুটবল ইতিহাসে মাত্র একজন গোলকিপার জিতেছেন ব্যালন ডি অ্যর। তিনি হলেন সর্বকালের সেরা গোলকিপার লেভ ইয়াসিন। লেভ তাঁর কেরিয়ারে ১৫১টি পেনাল্টি শট ঠেকিয়েছিলেন এবং ২৭০ ম্যাচে ক্লিন শীট রেখেছিলেন! তিনি ১৯৮৮ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বোচ্চ বেসামরিক সন্মান ‘অর্ডার অফ লেনিনক্স সম্মাননায় ভূষিত হন। এছাড়াও অসংখ্য অগণিত পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন লেভ ইয়াসিন। ফুটবল ইতিহাসের সেরা গোলকিপার কে? পিটার শিল্টন, দিনো জোফ, গর্ডন ব্যাঙ্কস, অলিভার কান কিংবা হালের বুঁফো, ক্যাসিয়াস, ন্যুয়ার অনেক গোলকিপারের নাম আসলেও একজনকে কেউ ছাড়িয়ে যেতে পারেননি; তাঁর নাম লেভ ইয়াসিন! ফুটবলের যেকোনো পজিশনের সেরা ফুটবলার নিয়ে তর্ক বির্তকের শেষ নেই; তবে ব্যতিক্রম একটা পজিশনে। কোনো সন্দেহ ছাড়াই সর্বকালের সেরা গোলকিপার লেভ ইয়াসিন। লেভ ইয়াসিন এমন একজন গোলকিপার যাঁর নামানুসারে ফ্রান্স ফুটবল গোলকিপারদের ‘ইয়াসিন ট্রফিক্স নামক একটা এওয়ার্ড দেওয়ার প্রচলন শুরু করেছে। ২০০৯ সালে সেন্ট্রাল ব্যাংক অফ রাশিয়া তাঁর স্মরণেই ২ রুবলের কয়েন ছাড়ে বাজারে। একটি দেশের মুদ্রায় একজন খেলোয়াড়ের ছবি সংবলিত থাকাই বলে দেয় তিনি কতটা ভালো ফুটবলার ছিলেন, ছিলেন কত ভালো মানের গোলকিপার! আর এই দুটি উদাহারণই বলে দেয় তাঁর অবস্থান, তাঁর ক্ষমতা, তাঁর বিশালতা, তাঁর মান ও মূল্য! একই সঙ্গে দেখায় তাঁর দেশ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের খেলার প্রতি ভালোবাসার গভীরতা। বস্তুতঃ, খেলাধূলার প্রতি সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত রাষ্টে্রর এই উৎসাহের কারণেই সেই দেশ ক্রীড়াক্ষেত্রে দ্রুত এগিয়ে গিয়েছে। ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মস্কো শহরের এক শ্রমিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এই মহান ফুটবলার লেভ ইভানোভিচ ইয়াসিন।