কম্পাস পত্রিকা

স্বাধীনতা সংগ্রামী শহীদ সুখদেব থাপার

Published on: 2024-03-20 17:09:32

Share on:

ভগৎ সিং এর নাম উচ্চারিত হলে তাঁর নামটাও চলে আসে।দুজন দুই রাজ্যে জন্মেছিলেন। বলতে চাইছি সুখদেব এর কথা ।সুখদেব থাপার। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুষ্টিমেয় যে কজন নিঃশব্দে ফাঁসির দড়িকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম সুখদেব।মৃত্যুর পূর্বমুহুর্তে ভগত সিং এর সাথে গলা মিলিয়ে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে আওয়াজ তুলেছিলেন “ইনকিলাব জিন্দাবাদ"। বর্তমান প্রজন্মের সাথে পরিচয় ঘটাতেই এ লেখার অবতারণা। সুখদেব থাপার ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের একজন শহিদ। তিনি শহীদ ভগৎ সিংহের এক অনন্য বন্ধু হিসাবেও পরিচিত। বিপ্লবী সুখদেব জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯০৫ সালের ১৫ মে পাঞ্জাবের লুধিয়ানা শহরে। সুখদেবের বাবার নাম ছিল শ্রী রামলাল থাপার। তাঁর জন্মের তিন মাসে আগেই তাঁর পিতার মৃত্যু হয়।সুখদেবের লালন পালন তার কাকা শ্রী অচিন্তরাম থাপার-এর কাছেই হয়। সুখদেবের জন্মের সময় তার কাকা অচিন্ত্যরাম জেলে সাজা খাটছিলেন। এক বিপ্লবী বাতাবরণে সুখদেব বড়ো হচ্ছিলেন। সুখদেব যখন তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র , গভর্নর তার বিদ্যালয়ে আসে। প্রধান শিক্ষকের আদেশে ছাত্ররা সবাই গভর্নর কে স্যালুট করে, কিন্তু সুখদেব তা করেনি। তখন সুখদেবকে জিজ্ঞাসা করা হল কেন সে গভর্নরকে স্যালুট করল না, সুখদেব পরিষ্কার বলে দিল, সে কোনো ইংরেজকে স্যালুট করবে না। ১৯২৮ সালের ৮ অগাস্ট প্রতিষ্ঠিত হয় “হিন্দুস্তান সোসালিস্ট রিপাবলিকান আর্মি(HRSA)।সুখদেব ছিলেন এই দলের পাঞ্জাব শাখার প্রধান কর্মকর্তা। এখানেই তাঁর সাথে ভগত সিং এর আলাপ ও ঘনিষ্ঠতা হয়। ভগৎ সিং এর তুলনায় সুখদেব পড়াশুনা কম করতো। কিন্তু তাঁর স্মৃতিশক্তি খুব তীক্ষ্ণ ছিল। বিপ্লবী কাজ পরিচালনার জন্য তাঁরা একটা বাড়ী ভাড়া নিল। দিনের বেলায় বাইরে থাকত আর রাত করে ফিরত। এভাবেই বাড়ির মালিক ও আশপাশের লোকজনের সন্দেহ হলো। এই কারণে সুখদেব নিজের মাকে সেই বাড়িতে নিয়ে এলো। এবার কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে, সে উত্তর দিত সে কাজ করে, অনেক দূরে রাস্তার কাজ চলছে। দিন-রাত কাজ করে বাড়ি আসতে দেরি হয়। সুখদেব ছিলেন সাহসী এবং দৃঢ় চিত্তের মানুষ। লাহোরে যখন বোম বানানোর কাজ শুরু হল, তখন সে ফিরোজপুর থেকে বোমের মশলা নিয়ে আসতেন। একবার মশলা আনতে গিয়ে সিপাহীদের খপ্পরে পড়ে গেছিল। এর ফলে সুখদেবকে অনেক মার খেতে হয়েছে। সুখদেব চুপচাপ মার খেতে থাকে, কিন্তু কিছু বলেননি, কারণ তার কাছে পিস্তল, কার্তুজ আর বোম বানানোর মশলা ছিল। ১৯২৮ সালে সাইমন কমিশনের বিরোধিতা করতে গিয়ে লাঠিচার্জে লালা লাজপত রায় মারা যান, তখন সুখদেবরা লালা লাজপত রায় এর হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯২৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভগৎ সিং,শুকদেব ও রাজগুরু ভুলবশত পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট স্যান্ডার্সকে হত্যা করেন। এই ঘটনাটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল ।এই ঘটনার কয়েকমাস পর ভগৎ সিং,শুকদেব ও রাজগুরু গ্রেপ্তার হন। স্যান্ডার্স হত্যার মামলাটি 'লাহোর ষড়যন্ত্র' নামে পরিচিত। বিচারে ভগৎ সিং, সুখদেব ও রাজগুরু কে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ১৯৩১ সালের ২৩ শে মার্চ, বিপ্লবীরা ফাঁসি এই তিন বিপ্লবীর ফাঁসী হয়। ফাঁসির সময় সুখদেবের বয়স ছিল মাত্র ছাব্বিশ বছর।লাহোর কারাগারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পরে শিবরাম রাজগুরু, ভগত সিং এবং সুখদেব থাপারের মরদেহ চরম গোপনীয়তায় দাহ করা হয়। ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য আত্মাহুতি দেওয়া এই তিনজন বীর শহীদের স্মৃতিসৌধ ভারতের পাঞ্জাবের ফিরোজপুর জেলার শতদ্রু নদীর তীরে হুসেইনিওয়ালা গ্রামে অবস্থিত। প্রতি বছর ২৩ শে মার্চ তাঁদের মৃত্যুর দিনটিকে স্মরণে রেখে শ্রদ্ধার সাথে "শহীদ দিবস" উদযাপিত হয়।

TOP RELATED